চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষে সফল দিনাজপুরের রাকিব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অ্যাকুরিয়াম কিংবা পাকা চৌবাচ্চায় নয়, বাড়ির আঙিনায় পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার এক যুবক। ৩৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এখন প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন তিনি। পুঁজি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ টাকায়।

বলছিলাম তরুণ উদ্যোক্তা ইয়াছিন আলী রাকিবের (২৫) কথা। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রঙিন মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় বেসরকারি চাকরি ছেড়ে এখন নিজের তৈরি প্রতিষ্ঠান ইয়াছিন অ্যাকোয়া ফার্মে সময় দিচ্ছেন।

Entrepreneur

লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন ইয়াসিন। এভাবে তিনি স্নাতক শেষ করেন। এরপর ইন্টারনেটে রঙিন মাছ চাষ দেখে তার ভালো লাগে। প্রথমে চারটি রঙিন মাছ কিনে পরিত্যক্ত একটি মাটির হাড়িতে শুরু করেন চাষ। পরে তিনি দেখলেন সেখান থেকে আটটি পোনা পাওয়া গেছে। এরপর তা বাড়তে থাকে। পরে তিনি সেই মাছগুলো সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরি রিংয়ের মধ্যে ছেড়ে দেন।

এভাবে একপর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন রাকিব। কিন্তু অ্যাকুরিয়াম কেনা বা পাকা চৌবাচ্চা তৈরিতে অনেক খরচ, যা তার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই বুদ্ধি খাঁটিয়ে বাড়ির আঙিনায় পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন চৌবাচ্চা। সেইসঙ্গে রিং দিয়ে তৈরি হাউজ ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বালতি এবং তেলের বোতলেও শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। আর এতেই দেখা মেলে সফলতার। এখন তার বাড়ির আঙিনায় সাতটি প্লাস্টিকের তৈরি চৌবাচ্চা, বেশ কয়েকটি রিং, প্লাস্টিকের বালতি ও হাড়িতে রয়েছে ১৫ প্রজাতির রঙিন মাছ। এই মাছ বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়েও এখন তার পুঁজি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ টাকায়। রাকিবের চাষ করা মাছের মধ্যে গাপ্পি, মারবেল মলি, হোয়াইট মলি, ব্ল্যাক মলি, প্লাটি, সোর্ড টেইল, ফাইটার, কৈ কার্প, জেব্রা, কমেট, সরটেইল, গোল্ড ফিস, ব্ল্যাকমর, চিকলেট, টেট্রা অন্যতম।

Entrepreneur

ইয়াছিন আলী রাকিব বলেন, আমি ২০২০ সালে রঙিন মাছ চাষ শুরু করি। শহরের একটি দোকান থেকে ৩০০ টাকায় চারটি গাপ্পি মাছ ও ৫০ টাকার খাবার কিনি। বাড়িতে ছোট একটি চাড়িতে পানি দিয়ে চাষ শুরু করি। এরপর মাছগুলো যখন পোনা দিতে শুরু করে তখন সিদ্ধান্ত নিই এই রঙিন মাছের চাষ আরও বাড়াবো।

তিনি বলেন, এখন আমার ৯ শতাংশ জমিতে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে সাতটি চৌবাচ্চা এবং বেশ কয়েকটি রিং, প্লাস্টিকের বালতি ও হাড়িতে মাছ আছে। এই চৌবাচ্চাগুলো পাকা তৈরি করতে গেলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হতো। অথচ আমার সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই চৌবাচ্চাগুলো যেন ভরে না যায়, সেজন্য নিচে বিশেষ ব্যবস্থায় প্লাস্টিকের পাইপ লাগানো আছে। ট্যাংকের পানি যেমন ওভার ফ্লো হলে বেরিয়ে যায়, তেমনি আমার এই চৌবাচ্চাগুলো থেকেও পানি বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওপরে রয়েছে নেট। যাতে করে গাছের পাতা বা ময়লা আবর্জনা না পড়ে।

Entrepreneur

রাকিব বলেন, বর্তমানে এখান থেকে মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করি। চার বছরে আয়ের পাশাপাশি পুঁজি বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ টাকা। আগামীতে আরও বড় পরিসরে রঙিন মাছ চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, সাতজন ছাত্র আমার কাছ থেকে মাছ নিয়ে চাষ করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে। যার মধ্যে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও আছে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে কিছু করলে সেখানে সফল হওয়া সম্ভব। মাছ নেওয়ার জন্য আমাকে অগ্রিম টাকা দিতে হয়। সারাদেশে আমার মাছ বিক্রি হচ্ছে।

Entrepreneur

দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, রঙিন মাছের চাষ অনেকটা শখের বশেই অনেকে করে। তবে এটাকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে আয় করা খুবই প্রশংসনীয়। সহযোগিতা চাইলে আমরা রঙিন মাছ চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করবো।

এমদাদুল হক মিলন/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।