নেচে-গেয়ে উৎসবে মাতলো ওরাওঁ সম্প্রদায়
বিপদ থেকে মুক্তি, অতিবন্যা ও খরা থেকে বাঁচতে দেশ ও মানুষের মঙ্গল কামনায় নেচে-গেয়ে ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব উদযাপন করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ওরাওঁ সম্প্রদায়। প্রাচীনকাল থেকে উৎসবটি পালন করে আসছে এ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নে পাঁচপীরডাঙ্গায় জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উদযাপন করা হয়েছে ধর্মীয় উৎসবটি। উৎসবের দিনে ওরাওঁ সম্প্রদায়ের মানুষ উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। সেই ডালে তাদের স্থায়ী পূজামণ্ডপে রেখে পূজা অর্চনা, নাচ-গান ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।
কারাম একটি গাছের নাম। ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষ গাছটিকে পবিত্র এবং মঙ্গলের প্রতীক মনে করেন। আর এ উৎসবের মাধ্যমে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরবে বলে মনে করেন তারা। বাংলা আশ্বিন মাসের শুরুতে এ উৎসবকে ঘিরে সে এলাকার বসবাসরত মানুষ নানা আয়োজনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল ও টাকা তুলে আতিথিয়েতা করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়-স্বজনদের।
উৎসবটিকে ঘিরে আগে থেকে নানা প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন এ সম্প্রদায়ের মানুষরা। পরিবার আর আত্মীয় স্বজন নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন সব বয়সী নারী-পুরুষরা।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর এ ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক দিবসটি পালন করে এখনকার ওরাওঁ সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। তারা এখানে কারাম গাছের ডালকে তাদের রক্ষাকবচ মনে করে। তারা মনে করে গাছটির মাধ্যমে তাদের জীবন রক্ষা হয়। এজন্য প্রতিবছর তারা এ উৎসবটি পালন করে। সারারাত তারা নানা সংস্কৃতি পালনের মঙ্গলবার কারাম গাছটি ভাসিয়ে দেবে।
কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেরকেটা বলেন, আদিকাল থেকে আমরা কারাম পূজা পালন করে আসছি। এ কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে আমরা মনে করি আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। এ পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। এখানে ২০০৩ সাল থেকে আমরা এ কারাম উৎসবটি পালন করে আসছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এ আয়োজনকে আরও মানসম্মত করে। কারণ এটি আমাদের বড় একটি ধর্মীয় উৎসব। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আমরা ভালোভাবে উৎসবটি পালন করতে পারবো।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুণাংশু দত্ত টিটো বলেন, এটি এ সম্প্রদায়ের মানুষের বড় ধর্মীয় উৎসব। এটিকে প্রাণবন্ত করতে আমরা সবসময় পাশে থাকবো।
ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, কারাম উৎসবকে উজ্জীবিত করতে সবসময় পাশে ছিল জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে উৎসবটি পালনে আরও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হবে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে কারাম উৎসব পালন করে আসছেন জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। আর এ উৎসব ঘিরে পাঁচপীরডাঙ্গা, সালন্দর, জামুরীপাড়াা, তেলিপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ মিলিত হন। শুরু হওয়া উৎসবটি চলবে তিনদিন।
তানভীর হাসান তানু/এসজে/জিকেএস