সালিশের রায় পছন্দ না হওয়ায় তালাক, সন্তানদের নিয়ে অনশনে স্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সালিশ বৈঠকের রায়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় বৈঠকেই স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন শাহীন হোসেন (৩৮) নামে এক ব্যক্তি। তবে তালাক দিলেও মোহরানার টাকা শোধ না করা এবং সন্তানদের ভরণ-পোষণের কোনো ব্যবস্থা না করায় স্ত্রী তার দুই সন্তানসহ শাহীনের বাড়ি ছেড়ে না গিয়ে অনশন শুরু করেছেন। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তিনি অনশনে রয়েছেন বলে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নিশ্চিত করেছেন।

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। সালিশে শাহীনের অভিযোগ ছিল তার স্ত্রী লিজা বেগম (৩৫) পরকীয়ায় আসক্ত। আর তার স্ত্রীর অভিযোগ ছিল স্বামীর জুয়া খেলার নেশা এবং টাকার যোগান দিতে না পারায় তার ওপর নির্যাতন করেন।

শাহীন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে। আর লিজা ভাঙ্গুড়া উপজেলার পাটুলি পাড়া গ্রামের জলিল সরদারের মেয়ে। তাদের ১০ ও ১২ বছরের দুইটি সন্তান রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৬ বছর আগে পারিবারিকভাবে শাহীনের সঙ্গে লিজার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই থেকেই শাহীন জুয়া খেলায় আসক্ত হন। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। বিয়ের সময় লিজার পরিবার থেকে নেওয়া যৌতুকের টাকা জুয়া খেলে শেষ করেন বলে লিজা জানিয়েছেন। এরপর শাহীন বিভিন্ন সময়ে সাংসারিক প্রয়োজনের কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ দিয়ে টাকা নিতেন। বাড়িতে ঘর করার সময়ও শ্বশুরবাড়ি থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকেও ঋণ নিয়ে জুয়া খেলতেন। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে শাহীন একাধিকবার আত্মগোপনেও থেকেছেন।

স্ত্রী লিজা বেগম জানান, তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শাহীনের এনজিওর ঋণ পরিশোধ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে শাহীনকে জুয়া খেলার নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন ব্যর্থ হন। উপরন্তু জুয়া খেলার টাকা না পেয়ে প্রায়ই তাকে মারধর করতেন শাহীন।

জানা গেছে, এসবে অতিষ্ঠ হয়ে গত সপ্তাহে ভাঙ্গুড়া থানায় শাহীনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন লিজা বেগম। এরপর শাহীন গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাড়িতে সালিশ বৈঠক ডাকেন। এ দম্পতির সমস্যা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক, জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হন।

এ সময় লিজার বিরুদ্ধে শাহীন পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন। তবে বৈঠকে ওই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সালিশ বৈঠক চলাকালেই স্ত্রী লিজাকে মৌখিকভাবে তালাক দেন শাহীন।

কিন্তু লিজার মোহরানার টাকা শোধ এবং সন্তানদের ভরণ-পোষণের কোনো ব্যবস্থা করেননি শাহীন। এতে বাবা-মা হারা লিজা বিপদগস্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তিনি তার অধিকার আদায়ের জন্য শাহীনের বাড়িতে অনশন শুরু করেন। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দুই সন্তানসহ অনশনে রয়েছেন তিনি। তবে শাহীনের ঘর তালাবদ্ধ থাকায় তিনি ঘরের বাইরে অবস্থান করছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি গত ৭ বছর ধরে ইউপি মেম্বার। তিনি জানেন গত ৭ বছর ধরে ওই নারী নির্যাতিত হয়ে আসছেন। নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন শাহীন। কিন্তু ওই নারীর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তালাক দেওয়ায় ওই নারী এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক বলেন, শাহীনের জুয়া খেলার কারণেই পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। সালিশ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু শাহীনের জন্য আমাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ওই নারী তার কিছু দাবির বিষয়ে অনশনে রয়েছেন বলে তিনি জানান।

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূ অভিযোগ দিলেও পুলিশের কিছু করার নেই। তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অনশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আদালতে মামলা করলে তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।