ক্ষুরা-পক্স রোগ
কম দামে কসাইয়ের কাছে গরু দিচ্ছেন খামারি-কৃষকরা
যশোরে হঠাৎ করে ব্যাপকহারে দেখা দিয়ে গরুর ক্ষুরা ও পক্স রোগ। এরই মধ্যে জেলার সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার বেনাপোল, নাভারণ, বাগআঁচড়া, শার্শা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামে খামার ও কৃষকের প্রায় এক হাজার গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোনো কোনো গ্রামে বেশ কিছু গরুর মৃত্যুও হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে কম দামে মাংস বিক্রেতার (কসাই) কাছে গরু বিক্রি করছেন খামারি ও কৃষকরা।
খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ষাঁড় ও গাভী মিলিয়ে আমার খামারে ১২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আমার মোট আটটি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে।
শার্শা উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, তাদের গরুর সারা গায়ে ক্ষত ও ঘা হচ্ছে। গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা করালেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। আক্রান্ত গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। কিছুদিন পর মারা যাচ্ছে। বেশি মারা যাচ্ছে বাছুর ও গাভী। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ক্ষুরা রোগও।
উলাশি গ্রামের খামারি আল আমিন বলেন, দুই দিনে আমার দুটি গাভী মারা গেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা। খামারের বাকি গরু নিয়ে চিন্তায় আছি।
আরও পড়ুন: দেড় মাসে ২২ গরুর মৃত্যু, চিকিৎসকের পরামর্শেও মিলছে না প্রতিকার
গরুর ক্ষুরা ও পক্স রোগের চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন খামারি ও কৃষকরা। এমনকি আতঙ্কিত হয়ে বড় বড় গরু কম দামেই মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। আর আক্রান্ত গরু কম দামে কিনে রাতের আধারে জবাই করে মাংস বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। এতে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ।
এদিকে যে সব খামারি বা কৃষকের গরু ক্ষুরা ও পক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে তারা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে প্রায় নয় হাজার ৯৮৫, ছাগল ১০ হাজার ৮৩০, ভেড়া ৫৫টি। উপজেলার অনেক গ্রামে গরু পক্স, ক্ষুরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। অনেকে সরকারি অফিসের পশু ডাক্তারের কাছে আসে না। যার মূল কারণ সাধারণ মানুষ ও খামারিদের অসচেতনতা। অনেক খামারিরা স্থানীয় হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে তাদের পশুর চিকিৎসা করান। যার অধিকাংশ চিকিৎসা ভুল। এমনকি জন্য ভুল চিকিৎসায় অনেক গরু মারা যায়। উপজেলার পশু চিকিৎসার জন্য ঘরে ঘরে হাতুড়ি ডাক্তার নামধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ভুল চিকিৎসায় আরও গরু মারা যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে খামারিসহ সাধারণ কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: আফ্রিকার ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন আমদানি নিষিদ্ধের দাবি
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তিনমাসে প্রায় ১২ হাজার গরু, ছাগলের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। খামারিসহ সাধারণ মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করাসহ মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। শার্শায় পশু চিকিৎসায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১৬টি উঠান বৈঠক করা হয়েছে। তারপরও এসব সাধারণ কৃষক ও খামারিরা পশু হাসপাতালে তাদের পশুকে না এনে স্থানীয় গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পশু চিকিৎসা করান। এরপর যখন দেখেন পশু মরার পথে তখন হাসপাতালে আনেন। মানুষের মত পশু যখন অসুস্থ হবে তখনি হাসপাতালে আনতে হবে।
মো. জামাল হোসেন/জেএস/জেআইএম