বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

বগুড়ায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬) নামে এক আইনজীবীর সহকারীর (মুহুরি) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মুহুরি হাবিবুরের স্বজনদের দাবি, ডিবি পুলিশের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।

এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে জেলা ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়।

হাবিবুর রহমান বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। পেশায় তিনি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী সহকারী ছিলেন ও জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক।

বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২ আগস্ট শাজাহানপুর থানার জোড়া গ্রামে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা খুকি বেওয়া নিখোঁজ হন। ৪ আগস্ট গ্রামের একটি পুকুরে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হয়। এ সময় নিহতের একটি পা পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে একই গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেওয়ার বিচ্ছিন্ন একটি পা উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। হাবিবুর ২০১৩ সালে খুকি বেওয়ার সৎ ছেলে বিপুল হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ছিলেন খুকি বেওয়া।

আটকের পর হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।

মৃত হাবিবুরের মামা আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ সাদা পোশাকে বিনা ওয়ারেন্টে হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়। তার খোঁজ করতে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো মেলেনি। পরে এক সিনিয়র আইনজীবী আমাকে নিশ্চিত করেন হাবিবুর ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছে। এর কিছু সময় পর তিনিই আমাকে হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে হাবিবুরের নিথর দেহ দেখতে পাই।

আইনজীবী মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, হাবিবুর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সারাদিন সুস্থভাবে কাজ করা মানুষটা আটকের পরে হুট করেই মারা গেলো। তাকে ডিবি পুলিশ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিচার চাই।

সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জাগো নিউজকে বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে অচেতন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তবে দেহে অক্সিজেনের মাত্র কমে যাওয়ায় রাত পৌনে ৯টার দিকে হাবিবুরের মৃত্যু হয়।

পুলিশি নির্যাতনে হাবিবুরের মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জাগো নিউজকে বলেন, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে কার্যালয়ে আনার পরপরই তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপরও যদি কারও সন্দেহ থাকে মরদেহ ময়নাতদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।