‘পাঁচ মাস ইলিশ ধরেছি, নিষেধাজ্ঞায় নদীতে যাবো না’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২৩

প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় মেঘনা নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। বুধবার (১১ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

এদিকে দিনব্যাপী নৌকা কুলে ভিড়িয়ে ইঞ্জিন, সোলার প্যানেল ও জালসহ বিভিন্ন মালামাল গুঁটিয়ে বাড়ি ফিরেছেন লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার এ ২২ দিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন তারা। মেঘনা উপকূলীয় এ জেলায় ৬০ হাজারেরও বেশি জেলে রয়েছে। যাদের অনেকেরই জেলে কার্ড নেই। তবে তাদের জীবন-জীবিকা মেঘনা নদী ঘিরেই আবর্তিত হয়।

বুধবার বিকেলে উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় মালামাল নিয়ে বাড়িতে ফিরতে দেখা যায় জেলেদের। নিষেধাজ্ঞাকালীন তারা মাছ শিকারে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। আর এ সময়টিতে তার পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন। কারণ মাছ শিকারে গেলে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে জেল ও জরিমানার ভয় থাকে।

আরও পড়ুন: ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: বরিশালে অভিযান শুরু

চরলরেন্স গ্রামের জেলে ইসমাইল হোসেন, নাজিম উদ্দিন ও চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের মো. কামালসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমন অনেক জেলে আছেন নদীতে মাছ ধরাই যাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু তাদের জেলে কার্ড নেই। আর যাদের জেলে কার্ড আছে তারাও প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার টাকা দিলে সরকারি বরাদ্দের চাল পায়। টাকা না দিলে তাদের চাল দেওয়া হয় না। আবার অনেকেই আছেন যাদের পেশা জেলে নয়। কিন্তু তারা সরকারি বরাদ্দের চাল নেন।

জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৬০ হাজার জেলে রয়েছে। যারা মেঘনা নদী ও সাগরে মাছ শিকারে নিয়োজিত। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগরে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৭৭২ জন। নিষেধাজ্ঞাকালীন তাদের মধ্যে ৩৯ হাজার ৭৫০ জেলেকে ২৫ কেজি করে খাদ্য সহায়তা (চাল) দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ আইন কার্যকর করা হবে। নিষেধাজ্ঞা সময়ে নদীতে সার্বক্ষণিক অভিযান এবং নজরদারি রাখবে মৎস্য প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জেলে ইসমাইল হোসেন বলেন, ইলিশ দেশের সম্পদ। পাঁচ মাস ধরে ইলিশ ধরেছি। এখন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মালামাল গুঁটিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। ইলিশের এ মৌসুম লাভজনক হয়নি। তবুও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা নদীতে যাবো না।

আরও পড়ুন: ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, তীরে ফিরেছেন জেলেরা

জেলে মো. কামাল বলেন, ইঞ্জিন ও সোলারসহ নৌকা থেকে সব মালামাল বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। এ ২২ দিন নদীর কুলে নৌকা খালি পড়ে থাকবে। আমরা নদীতে যাবো না। সরকার থেকে আমাদের চাল দেওয়া হবে। তবে মার্চ-এপ্রিল চাল নিতে দুই হাজার টাকা করে দিতে হলেও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় টাকা দিতে হয় না।

জেলে নাজিম উদ্দিন জানায়, প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ করে নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নামতে হয়েছে। মার্চ-এপ্রিল নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রায় ৫ মাস মাছ শিকারে গিয়ে মাত্র দুদিন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পেয়েছি। কাছাকাছি অবস্থানে থাকলে প্রতিবার ৫-৭ হাজার টাকা তেল খরচ হয়। দূরে গেলে খরচ প্রায় ৩ গুণ বেড়ে যায়। পরে মাছ বিক্রি করে খরচের টাকা রেখে জেলেদের ভাগে সামান্য কিছু টাকা থাকে। এ জন্যই জেলেরা ধারদেনায় ডুবে থাকে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে চলে আসে। আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমায় বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ সময়টাতে ইলিশ মাছ বাধাপ্রাপ্ত হলে তাদের প্রজননও বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে এসব ডিমওয়ালা মা ইলিশ যাতে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য জেলেদের নদীতে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখা হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জেলেদের চাল দেওয়া হয়। কাদের টাকা দেয়, কে বা কারা নেয়, এ ধরণের কোনো অভিযোগও কেউ আমাদের করেনি।

কাজল কায়েস/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।