জয়পুরহাট মা ও শিশু হাসপাতাল

জনবল সংকট আর জীর্ণ ভবনে চলছে প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স ও মায়েদের ডেলিভারি সেবা দিয়ে সুনাম কুড়াচ্ছে জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। ঝড়-বৃষ্টির দিনেও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগীরা আসছেন সেবা নিতে। তবে এই হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবল সংকট। এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরোনো ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা। তাই দ্রুত হাসপাতাল ভবনটি সংস্কারের দাবি সচেতন মহলের।

জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এটি জয়পুরহাট মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল নামেও বেশ পরিচিত। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রোগীদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত কয়েকমাসে এই হাসপাতালে তিন শতাধিক মায়ের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এমনকি গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির মধ্যেও জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা বেশ কয়েকজন নারীর সন্তান প্রসব করানো হয়েছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে।

আরও পড়ুন: রাজবাড়ী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে দেড় বছর ধরে সিজার বন্ধ

চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালটি সুনাম কুড়ালেও বর্তমানে জনবল সংকটের পাশাপাশি ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। কিছু জায়গায় খুলে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও দেওয়াল দিয়ে বের হয়েছে গাছের শেকড়। ভারী বর্ষণে ছাদের ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবন সংস্কারের দাবি রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এছাড়া জনবল কম হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের অনেক সময় ডাবল ডিউটি করতে হয়। এতে রোগীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফদের।

আশরাফুল ইসলাম রনি নামে এক প্রসূতির স্বামী জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্ত্রীকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। মেয়ে সন্তান হয়েছে। এখানে সেবা মোটামুটি ভালো। তবে দীর্ঘদিনের পুরোনো এ হাসপাতালের ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। ভূমিকম্প হলে প্রাণের একটা ঝুঁকি থেকে যায়। সরকার হাসপাতালটি আবার নতুন করে করলে সবার জন্য ভালো হয়।

পাঁচবিবির ছাতিনালী গ্রাম থেকে আসা মোকছেদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকবছর আগে এখানে এসেছিলাম, তখন ভবন ভালো ছিল। কিন্তু আজ এসে দেখলাম ফাটল ধরেছে। হাসপাতালে স্টাফও অনেক কম। হাসপাতালের স্টাফ বাড়ালে আরও ভালো সেবা পাওয়া যেত।

আরও পড়ুন: চার মাসেও চালু হয়নি নীলফামারীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

রুমি আক্তার নামে এক রোগীর স্বজন জাগো নিউজকে বলেন, আমি আমার ছোট বোনকে এ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসার কোনো টাকা দিতে হয়নি।

হাসপাতালের স্টাফ শ্রদ্ধা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টির মধ্যেও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। আমরা জনবল কম নিয়েও রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু হাসপাতালের ভবন অনেক পুরোনো। অনেক জায়গায় ফাটল ধরায় আমরা অনেক টেনশনে থাকি, কখন ছাদ ভেঙে পড়ে।

খালেদা বেগম নামে এক স্টাফ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে জনবল অনেক কম। এজন্য ডাবল ডিউটি করতে হয়। পর্যাপ্ত জনবল থাকলে রোগীরা আরও ভালো সেবা পাবে। পাশাপাশি ভবনের অবস্থা অনেক খারাপ। খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মাঝে আমরা আছি। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন: প্রতিটি জেলা শহরে হবে শিশু হাসপাতাল: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এ বিষয়ে জয়পুরহাট পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. কে এম জোবায়ের গালীব জাগে নিউজকে বলেন, এখানে মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবের পাশাপাশি সিজারিয়ান সেবাও দেওয়া হয়। গত কয়েকদিন বৃষ্টির মধ্যেও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মায়েদের ডেলিভারি হয়েছে। মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে হাসপাতালটি কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, জুনিয়র-সিনিয়র কনসালট্যান্ট, শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ কিছু জনবল সংকট রয়েছে। জনবল বাড়লে সেবার পরিসরটা আরও বাড়বে। এছাড়া নতুন করে এই হাসপাতালগুলো প্রতিটি জেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আমাদের এই হাসপাতালও সেই তালিকায় রয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি, আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।