শ্রমিক আঞ্জুয়ারার শাশুড়ি
‘বউমা তো কোনো অন্যায় করেনি, তাকে ওরা মেরে ফেললো কেন’
গাজীপুরের কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর ছিলেন মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০)। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের চর নাটিপাড়া গ্রামের মাজেদা খাতুন ও মৃত মন্টু মিয়ার মেয়ে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। আঞ্জুয়ারা একই ইউনিয়নের সালাল গ্রামের জামাল বাদশার স্ত্রী। তার আরিফ নামে সাত বছরের একটি ছেলে ও জয়া নামে ছয় বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বিক্ষোভরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন মারা যান। এ খবরের পর থেকে আঞ্জুয়ারার মা মাজেদা খাতুন বাগযুদ্ধ হয়ে আছেন। ছোট মেয়ের এমন মৃত্যুতে কিছুতেই থামছে না তার আহাজারি। বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে শ্বশুরবাড়ির আঙিনায় আঞ্জুয়ারার মরদেহ দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে পুলিশ-পোশাক শ্রমিক সংঘর্ষ, নারী নিহত

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আঞ্জুয়ারার প্রতিবেশীরা বাগযুদ্ধ মা মাজেদা খাতুনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউবা ফেলছেন চোখের পানি।
চরগিরিশ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মেয়েটির এমন মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। তার দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। কারণ মা বেঁচে থেকে দূরে থাকলেও সন্তানের একটা শক্তি থাকে।

আঞ্জুয়ারার স্বামী জামাল বাদশার ছোট বোন আর্জিনা খাতুন বলেন, কাজের জন্য ভাই জামাল ও ভাবি গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে থাকতেন। তাদের দুই শিশুসন্তান গ্রামের বাড়িতে দাদির কাছে থেকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতো। কিন্তু সম্প্রতি পূজার ছুটিতে দুই সন্তান কোনাবাড়ীতে মা–বাবার সঙ্গেই ছিল। ছুটি শেষে আবার দাদির কাছে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছে। ঠিক এমন সময়ে ঘটে গেলো এ মর্মান্তিক ঘটনা।

আঞ্জুয়ারার শাশুড়ি নূরজাহান বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমার বউমা তো কোনো অন্যায় করেনি। তাকে ওরা মেরে ফেললো কেন? এখন দুই নাতির কান্না কেমনে থামাবো।
আঞ্জুয়ারার শ্বশুর শাহ আলম বলেন, আমার বউমা ফোন কইরা প্রতিদিনই কইছে, আব্বা, এ বয়সে বেশি খাটাখাটি কইরেন না। শরীর খারাপ ওইবো। আপনেরা ভালো থাইকলেই আমরা বালো থাকমু। এই কতা আর কোনো দিন কেউ কইবো না।
এসজে/জেআইএম