মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের সেই নেতার নামে মামলা
নৌকায় ভোট না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাত কেটে নেওয়া ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া আওয়ামী লীগের সেই নেতা আলী ইস্কান্দারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সিংগাইর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
আলী ইস্কান্দার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের অনুসারী।
এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদের কয়েকজন কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকে ভোট চেয়ে ছোট পোস্টার (হ্যান্ড বিল) বিতরণ করছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন আলী ইস্কান্দার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাত কেটে নেওয়া, গুলি করে হত্যাসহ নানা হুমকি-ধামকি দেন। এসময় ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, আলী ইস্কান্দার উচ্চস্বরে বলছেন, ‘এবার আমার দেখার আছে। আমি তো কেন্দ্রের ভেতরে থাকবো। নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে হাত কাইটা (কেটে) ফালামু (ফেলবো)। রেডি (প্রস্তুত) থাইকো। সাহস থাকে পাল্লা লইবা আমার লগে। কে আছে আমার এগিনেস্টে (বিরুদ্ধে) যাবে। লজ্জা করে না তোমাদের। দেখার আছে আমার। খোদার কসম, দেখার আছে এবার। চৌদ্দ শিকে ঢুকাইয়া ছাইড়া দিমু। সরকার আমার, পাওয়ার আমার, প্রশাসন আমার, এমপি আমার। যাইও ভোট দিবার যাইও ট্রাক মার্কায়। ট্রাকের চাকার তলে ফালাই দিমু। ফাজলামো। হাড্ডি মাংস এক কইরা ফালামু প্রত্যেকটাকে গুলি করবো।‘
তার হুমকির এই ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়।
পরে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হত্যার হুমকিসহ নানা হুমকি ধামকি দিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এতে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এ ঘটনায় বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৭৩(২খ)/৮৪ক ধারার অপরাধে আওয়ামী লীগ নেতা আলী ইস্কান্দারকে আসামি করে সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, আসামির এ ধরনের বক্তব্য ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি হয়। এতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবৈধভাবে প্রভাব খাটানোর অভিপ্রায় প্রকাশ পায়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিংগাইর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো। তিনি বলেন, আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহম্মেদের এক কর্মীকে হুমকি ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্মী শাখাওয়াত হোসেন বাদি হয়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার কর্মী ফরিদ মোল্লা ও রিফাত চৌধুরীসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে হরিরামপুর থানায় মামলা করেছেন।
বি এম খোরশেদ/এএইচ/জেআইএম