ইনানী সৈকতের জেটি ব্যবহার করছে জাহাজ কোম্পানি!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৫:২৩ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

কক্সবাজারের ইসি (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল) এলাকা ইনানী সৈকতে আন্তর্জাতিক নৌমহড়ার কথা বলে নির্মাণ করা হয় দীর্ঘ এক নৌ-জেটি। সেসময় পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে সরকারি সেই মহড়া শেষে জেটি অপসারণ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু মহড়া শেষ হওয়ার এক বছর অতিক্রম হলেও অপসারণ করা হয়নি সৈকতে নির্মিত সেই জেটি।

উল্টো বেসরকারি একটি জাহাজ কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় জাহাজের হাজারও যাত্রীর নিয়মিত আসা-যাওয়া পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় যেমন প্রভাব পড়বে, তেমনি স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়কটিও হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা।

jagonews24

যদিও অনুমতির বিষয়টি জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন। জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নিয়ে তারা জেটি ব্যবহার করছেন।

জেটিটি দ্রুত অপসারণ কিংবা বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে গত ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতারা।

তথ্যমতে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথমবারের আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার আয়োজন করে। এ মহড়ার জন্য ২০২০ সালে কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে জেটি নির্মাণ কাজ শুরু করে নৌবাহিনী। সৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করে বাঁধ নির্মাণ ও ইসি এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে ২০২২ সালের হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। রিটের শুনানি শেষে একই বছর ১ সেপ্টম্বর ‘ইনানীতে নির্মিত জেটি কেন অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হবে না’ মর্মে প্রতিরক্ষা সচিব ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

jagonews24

এরইমধ্যে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর নৌ-মহড়া শেষ হলেও অপসারণ করা হয়নি জেটিটি। উল্টো ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স’র মালিকানাধীন ‘এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ জেটিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। জেলা প্রশাসনের অগোচরে এবং উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকার পরও বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে জেটিটি ব্যবহার হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ সড়ক রক্ষায় দ্রুত জেটি অপসারণ কিংবা বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাপা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসিএ আইন অমান্য করে কক্সবাজারের ইনানীতে নির্মিত জেটি অপসারণ না করে উল্টো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মেরিন ড্রাইভ সড়ক। চরম প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও প্রতিবেশের। তাই দ্রুত জেটি অপসারণের দাবি জানান তারা।

বাপা কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, ‘জেটি নির্মাণের সময় কোনো ধরনের মেরিন সমীক্ষা ছাড়াই ইসিএ সৈকতে ১০০ ফুট গভীরে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে প্রায় এক হাজার ফুট স্থায়ী পাকা জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবহারের পর জেটি সরিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া দুঃখজনক।’

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেশের প্রত্যেকটা মানুষের অহংকার। এ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/s-4-20240114172326.jpg

জানতে চাইলে ‘এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ জাহাজের কক্সবাজার কার্যালয়ের ইনচার্জ হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা জেটি ব্যবহার করছি। এটি ব্যবহারের জন্য আমরা জেটি সংশ্লিষ্টদের রাজস্বও দিয়েছি।

‘রাজস্ব দেওয়ার চালান কপিটি দেওয়া যাবে কি না’—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আপনাদের দেবো কেন?’

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, ‘জাহাজ চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন নেই। শুধু নৌ মন্ত্রণালয়ের পারমিট দরকার। আমাদের সেটি রয়েছে।’

এ বিষয়ে কক্সবাজারের এডিএম মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, জেটি অপসারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে আমাদের অগোচরে জাহাজ চলাচল শুরু করেছে বলে জেনেছি। তবে জাহাজ চলাচলের কোনো অনুমতি দেওয়নি জেলা প্রশাসন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমে পরে জানাবেন উল্লেখ করে ফোন রেখে দেন।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।