কয়েক মিনিটে ব্যাংকের ভোল্ট ভেঙে চুরি হয় ১০ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

খালি পায়ে মুখে মাফলার বেঁধে নির্বিঘ্নে দুই চোর মাত্র কয়েক মিনিটে ব্যাংকের ভোল্ট থেকে ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা চুরি করে। বগুড়া সদরে এনআরবিসি ব্যাংকের এই ঘটনায় শনিবার রাতে ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছেন।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে (২৭ জানুয়ারি) উপজলার শাখায়িরা ইউনিয়নের পল্লীমঙ্গল হাটে এই চুরির ঘটনা সংঘঠিত হয়। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

পল্লীমঙ্গল হাটে আব্দুর রাজ্জাকের দুইতলা পাকা বাড়ির নিচতলায় একটি ইউনিটে মাত্র দুইটি কক্ষ নিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের উপশাখা। পাশের দুইটি ইউনিটে এসকেএস এনজিও ও বাড়ির মালিক আব্দুর রাজ্জাক বসবাস করেন। এনআরবিসি ব্যাংক ও এসকেএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুইটি প্রতিষ্ঠান সেখানে থাকলেও বাড়ির বাইরে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য প্রহরীও রাখেনি প্রতিষ্ঠান দুইটি। এনআরবিসি ব্যাংকের দুই কক্ষে মাত্র দুইটি সিসিটিভ ক্যামের লাগানো ছিল। দুর্বৃত্তরা ক্যামের দুইটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সিন্দুক ভেঙে টাকা চুরি করে। তবে এরআগে রেকর্ড হওয়া ফুটেজে ব্যাংকটির দুইটি কক্ষে প্রায় সাড়ে তিন মিনিট দুই দুর্বৃত্তের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

ব্যাংক চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৪৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে মুখে মাফলার বাঁধা খালিপায়ে মধ্যবয়সী দুই যুবক ব্যাংকটির টাকা লেনদেনর কক্ষে প্রবেশ করেন। ওই কক্ষে কাঁচের বুথের মধ্যে একটি সিন্দুকে গ্রাহকদের ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা রাখা ছিল। ফুটেজে দেখা যায় দুর্বৃত্ত দুইজনের পরণে ছিল জ্যাকেট ও ফুল প্যান্ট। এরমধ্যে একজনের জ্যাকেটের চেইন খোলা ছিল ও প্যান্ট দুই পায়ের হাঁটু অব্দি মোড়ানো ছিল। জ্যাকেটের নিচে ইংরেজি অক্ষরে ‘ইন’ লেখা গোল গলার একটি গেঞ্জি পরে ছিলেন। হাতে টর্চলাইট ও কোমরে একটি ধারালো চাপাতি ছিল। অপরজনের প্যান্টের পেছেনের পকেটে তালা কাটার যন্ত্র ও কাঁধে স্পোর্টস ব্যাগ ছিল। এছাড়াও তাকে বাটন ফোন দিয়ে বিভিন্ন সময় আলো জ্বালাতে দেখা যায়। প্রায় দেড়মিনিট সেখানে তারা টাকা রাখার সিন্দুকটি খুঁজতে থাকেন। পরে কাঁচের বুথে মধ্যে রাত ১টা ৪৭ মিনিট ২০ সেকেন্ডে তারা প্রবেশ করে টাকার সিন্দুক দেখতে পান। কাঁচের ওই বুথের দরজায় কোনো তালাই দেওয়া ছিল না। টাকার সিন্দুকের খোঁজ পেয়ে তারা সেখানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ রাত ১টা ৪৭ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে বিচ্ছিন্ন করে দেন।

Bank-(2).jpg

এরপরে রাত ১টা ৫১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপকের কক্ষে মাত্র ২৩ সেকেন্ড পর ওই ক্যামেরার সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন তারা। এরপর নির্বিঘ্নে তারা ব্যাংকটির সিন্দুকে রাখা গ্রাহকদের ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা চুরি করে চম্পট হন। ব্যাংকের বাইরে কোনো ক্যামেরা না থাকায় দুর্বৃত্তদের আসা-যাওয়া নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী ও ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার হিসাব-নিকাশ করে ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছিল। মাসের শেষদিকে হওয়ায় অনেক গ্রাহকদের কিস্তির টাকা তুলে ফিল্ড অফিসারদের আসতে দেরি হয়। এইজন্য ওইদিন আর ব্যাংকের মূল শাখায় টাকা পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমাদের দুইটি সিসিটিভি ক্যামেরা সচল ছিল। পুলিশ সেগুলোর রেকর্ড সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করছে। ঢাকা থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তারা এসছেন, তারাও বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছেন।

বাড়ির মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, শনিবার ভোরে তিনি চুরির ঘটনা টের পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশে খবর দেন। বাড়ির মূল গেট বন্ধ ছিল। ছাদের ওপর গিয়ে সিঁড়িঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চুরি করেছেন।

বগুড়ার পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এসপি) স্নিগ্ধ আক্তার বলেন, এখনও চুরির ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলাও সম্ভব নয়। তবে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। তবে ব্যাংকটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল।

এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে গলি দিয়ে ভোল্ট পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কেটে সোনালী ব্যাংকের বগুড়ার আদমদিঘী শাখা থেকে ৩১ লাখ টাকা লুট করেছিল দুর্বৃত্তরা। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করলেও এখনও কাউকে শনাক্ত বা লুটের টাকা উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর ২০১৮ সালের ১১ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলায় পোস্ট অফিসে ডাকাতি চেষ্টা ও ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি গাবতলী উপজেলার রুপালি ব্যাংকে এক কিশোর ভোল্ট লুটের চেষ্টা করে। এছাড়াও ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল বগুড়া শহরের সাতমাথায় প্রধান ডাকঘরে অফিস সহায়ককে হত্যা করে ভোল্ট ভেঙে ৮ লাখ টাকা লুট করা হয়।

এফএ/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।