সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নির্মাণের ৩ বছরেই ভুতুড়ে পরিবেশ, চাহিদানুযায়ী ওষুধ পান না রোগীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক আর দিনমজুর। অসুস্থ হলে তাদের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে ভরসার সেই হাসপাতালে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি ওষুধ। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করে অসহায় রোগীদের লিখে দিচ্ছেন বিভিন্ন কোম্পানির দামি ওষুধের প্রেসক্রিপশন। যা কিনে খাওয়ার সক্ষমতা নেই অনেকেরই। চিকিৎসা নিতে এসে নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসকের রুম থেকে রোগীরা বের হলেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের হাতে থাকা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি করছেন ও ছবি তুলছেন। যদিও সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষেধ। তারপরও বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হাসপাতালের গেটে রোগীদের টানাহেঁচড়া করতে দেখা যায়।

জানা যায়, ২০২০ সালে করোনার সময় হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা এ হাসপাতালটি নির্মিত হয়। কিন্তু মাত্র তিন বছরেই ময়লা আবর্জনায় তৈরি হয়েছে নোংরা পরিবেশ। যেখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে টাইলস। নতুন অব্যবহৃত বেডগুলো ধুলো-ময়লায় ডেকে গেছে। টয়লেটগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে আছে। অনেক জায়গায় আবর্জনা জমে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। ওয়াশরুমের বেশ কয়েকটি বেসিন ভেঙে গেছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই হাসপাতালটি মাত্র কয়েক বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ সুমিত্র মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের পরিবেশ এমন হয়েছে। সুইপার না থাকায় টয়লেট নোংরা। আর হাসপাতাল নির্মাণ করার পর থেকেই টাইলসগুলো খুলে পড়ছে। সম্ভবত ভবনের কাজ মানসম্পন্ন না হওয়ায় টাইলস খুলে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাসিমা আক্তার নামে এক ভ্যান চালকের স্ত্রী বলেন, টাকার অভাবে শিশু বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে হাসপাতালে এসেছি সরকারি চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে। কিন্তু চিকিৎসক দামি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। সরকারি ফ্রি ওষুধ নেই বলে জানিয়েছে। কিন্তু যে ওষুধ লিখে দিয়েছে তা কেনার মতো টাকা আমার কাছে নেই।

চান মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিয়েছে। একটা সরকারি ওষুধও দেয়নি। আমি এসেছিলাম ডাক্তার দেখিয়ে ফ্রি ওষুধ নিতে। কিন্তু পেলাম না, তাই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।

সুত্র সেন নামে এক রোগী জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্বাশ্বকষ্টে সমস্যা। অথচ ডাক্তার একপাতা প্যারাসিটামল দিয়েছেন আর কোনো ওষুধ দেয়নি। সব ওষুধ লিখে দিয়েছে। বাইরে দোকান থেকে কিনে খেতে বলেছেন। বাইরে বের হওয়ার সময় একদল লোক আমার ওষুধের কাগজ হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছবি তুলে রেখেছেন।

হাসপাতালের সামনে অবস্থানরত রাজু নামে একটি ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধি বলেন, কারো কাছ থেকে জোর করে ছবি তোলা হয় না। হাসপাতাল থেকে বের হলে রোগীদের অনুরোধ করে ছবি তুলি। এটা আমাদের কোম্পানির দায়িত্ব। কি করবো বলেন!

কয়েকজন প্রতিনিধি বলেন, কোনো কোম্পানির সঙ্গে হাসপাতালের কারো চুক্তি আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আব্দুল মমিন বলেন, নতুন হাসপাতাল, তাই ওষুধের বাজেট কম। তবে ওষুধ সরবারহ করছি না বা ওষুধ না পেয়ে রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছে, এ তথ্যটা আমার কাছে নেই। কমন আইটেম ওষুধ সব সময় দিতে পারি। কিছু আনকমন আইটেম ওষুধ দিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, কোনো ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। কিছু ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিরা বাইরে এসে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন। আজকেও আমি কয়েকজন প্রতিনিধিকে বের করে দিয়েছি। এরপরেও ওরা আসে, যা আমি অনেক সময় জানিও না।

নোংরা পরিবেশ সম্পর্কে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতাল চালু হওয়ার পর থেকে নীচতলার দুটি বাথরুমে পানির লাইন বন্ধ রয়েছে। তারপর সুইপার ও পরিছন্নতাকর্মীর পদে কোনো লোক নেই। যে কারণে পরিবেশ একটু নোংরা। আর ভবন নির্মাণের পর থেকেই টাইলসগুলো খুলে পড়ছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনিছুর রহমান বালী জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের কোম্পানির ওষুধ লিখে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সব সময় সব ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোম্পানি প্রতিনিধিরা যেনো হাসপাতালে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালে যে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।

এন কে বি নয়ন/এনআইবি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।