ভ্যালেন্টাইনস ডে
নওগাঁয় প্রেমঘটিত ৩৬ মামলার শুনানি, যুগলরা পেলেন ‘লাভ ক্যান্ডি’
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে আজ। বিশ্বব্যাপী খুব ঘটা করে পালন করা হয় দিনটি। এই দিনে বিনোদনকেন্দ্রগুলো যুগলদের পদচারণায় মুখর থাকে। প্রিয়জনকে ভালোবেসে উপহার দেন ফুলসহ বিভিন্ন সামগ্রী।
বিশেষ এই দিনটিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। ভালোবাসা দিবসে এ আদালতে ৩৬টি মামলার শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন তিনি। যে মামলাগুলোর প্রত্যেকটিতেই রয়েছে অসময়ে প্রেমে জড়ানো যুগলদের গল্প।
আদালত সূত্রে জানা যায়, তিন বছরের প্রেমের সম্পর্কের টানে সাপাহার উপজেলার ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী তার প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ২০২০ সালের ২২ জুলাই তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার মূল কারণ ছিল কিশোরী সনাতন ধর্মের অনুসারী। আর তার প্রেমিক ছিলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। ওই কিশোরীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার। টানা ছয়দিন লাপাত্তা থাকার পর সাপাহারে শাখা কিনতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় এ যুগল। এরপর কিশোরীর বাবার করা অপহরণ মামলায় প্রেমিককে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
আরেক ঘটনায় জানা যায়, সাপাহার উপজেলার ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী প্রেমের টানে গতবছরের ৯ জানুয়ারি প্রেমিকের কর্মস্থল ময়মনসিংহে পালিয়ে যায়। এরপর বিয়ে করে রাজমিস্ত্রি স্বামীর সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। এরপর ওই বছরের ২২ জানুয়ারি সেখান থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে ওই কিশোরী। ততদিনে তার বাবা প্রেমিকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় প্রেমিককে আটক করে পুলিশ। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে ওই কিশোরীকে তার পরিবারের জিম্মায় দেয়।

আড়াই বছর আগের ঘটনা। তখন করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো দেশ। করোনা টিকা নিতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে পোরশা উপজেলার ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী। প্রেমের পাঁচ মাসের মাথায় ২০২২ সালের ৯ জুলাই প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে বের হয় সে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে ঘুরিয়ে একটি নিরিবিলি স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন প্রেমিক। পরদিন ভোরে তাকে রেখে পালিয়ে যান প্রেমিক। পরে এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল ধামইরহাট উপজেলার এক কিশোরী। সাড়ে তিন বছর আগে ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয় জয়পুরহাটের জোভানের। বিয়ের দিন বরযাত্রীর খাওয়া নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। এ ঘটনায় বিয়ে ভাঙার এক সপ্তাহ পর ২০২০ সালের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি জোভানের বাড়িতে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। সেখানে দুজন স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস শুরু করেন।
ওই ঘটনার জেরে জোভানের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন কিশোরীর বাবা। সেই মামলায় ১১ দিন পর জোভানকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
নওগাঁয় এমন ৩৬ যুগলের মামলার শুনানি হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। এদিন আদালতে আসা যুগলদের ‘লাভ ক্যান্ডি’ দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মকবুল হোসেন।
বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার বেলা ১১টায় এজলাসে বসে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত হওয়া যুগলদের অসময়ে প্রেমে না জড়িয়ে নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, বাবা-মায়ের আদেশ মেনে চলা, পড়াশোনা অব্যাহত রাখা, আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে উদ্বুদ্ধ করেন বিচারক।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন বলেন, আজ ভিন্নমাত্রায় আদালত বসে। অসম প্রেমে জড়ানো, অপহরণ এবং বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলাগুলো আজ শুনানির জন্য রাখা হয়। বিচারক সংশ্লিষ্টদের পড়াশোনার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও গুরুজনদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার উপদেশ দেন।
নওগাঁ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, মামলাগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুনানি করলে বিচারক সবাইকে একই উপদেশ দিতে পারতেন না। তিনি মামলাগুলো একই দিনে শুনানির উদ্যোগ নিয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মশিউর রহমান/এসআর/জিকেএস