ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বেছে নিলেন কৃষি, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৯:০০ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নীলফামারীতে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করা তরুণ উদ্যোক্তা আবু সুফি আহমেদ (৩০)। তিনি চাষ করছেন জিন সিং, গুলঞ্চ, অর্জুন, মাশরুম, সামুদ্রিক শৈবাল, ছায়া প্রোটিন, সজনে পাতা, বড়ই পাতা, নিমপাতা ইত্যাদি। ৫২ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছেন উচ্চ ফলনশীল বিটরুট। নিজেই তৈরি করেছেন ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) নামের একটি কোম্পানি।

নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুরের ছেলে আবু সুফি আহমেদ। বিভিন্ন চাষাবাদের পাশাপাশি ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) কোম্পানি খুলে চাষাবাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রি করে আসছেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বেছে নিলেন কৃষি, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া

আবু সুফি আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করেছি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু আমার পছন্দ কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া। কৃষির পাশাপাশি গাভি ও হাঁস পালন এবং পুকুরে মাছ চাষ করে আসছি। কৃষিতে নতুন কী চাষাবাদ করা যায় তা নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের প্রস্তাবে জেলায় প্রথম বিটরুট চাষ করছি। খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তেমন যত্ন ছাড়াই ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে বিটরুটের আবাদ করবো।’

তিনি জানান, এককেজি বীজ ও সার মিলিয়ে ছয় হাজার টাকা, লেবার ও পানি খরচ ৯ হাজার টাকা মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বিটরুট চাষে। বেলে, দো-আঁশ জাতীয় উর্বর মাটিতে চাষ করলে সার কম লাগে। এ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় খরচ অনেকটাই কম।

ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বেছে নিলেন কৃষি, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া

ডিসেম্বরের শুরুতে বিটরুটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত হতে ৭৫-৮০ দিন সময় লাগে। মার্চের শেষে ফসলটি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত সময়। এটি সুস্বাদু হওয়ায় খালি মুখে, ভাজি ও স্যুপ করে খাওয়া যায়।

বিটরুট খাওয়ার বিষয়ে আবু সুফি আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘খাবার হিসেবে বড় বড় সুপার শপ, রেস্তোরাঁ, চাইনিজ হোটেলগুলোতে স্যুপ, জুসসহ বিভিন্ন রেসিপি হিসেবে বিক্রি হয়। সবজিটির পুষ্টিগুণ অনেক। ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে আছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবেও এটি খুবই কার্যকর।’

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মাহফুজ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারীর মাটি ও আবহাওয়া বিটরুট চাষের জন্য উপযুক্ত। সবজিটি বেশি করে চাষের জন্য এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সুপারফুড হিসেবে পরিচিতি বিটরুট বিদেশি সবজি। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এ সবজি দেশের মানুষের পুষ্টিগুণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বেছে নিলেন কৃষি, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়া

বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারীতে প্রথম বিটরুট চাষ করেছেন আবু সুফি আহমেদ। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটি ব‍্যাপকভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব। এ ধরনের চাষাবাদে যুবকরা আগ্রহী হলে কৃষিশিল্পে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা এ কর্মকর্তার।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।