তিন যুগ ধরে মাঠে-ঘাটে শিঙাড়া বিক্রি করেন দিনেশ দাস

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০২:৫৩ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৪

 

প্রায় তিন যুগ ধরে নিজের হাতে বানানো মজাদার শিঙাড়া বিক্রি করে সংসার চালান দিনেশ কুমার দাস। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বামনগাতী-বাজিদাদপুর ফসলি মাঠের পাশে রাস্তায় এই বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা হয়। প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাড়িতে শিঙাড়া তৈরি করে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে-ঘাটে বিক্রি করেন তিনি। মূলত সাধারণ মানুষ ও জমিতে কাজ করা কৃষক-শ্রমিকরা তার ক্রেতা। এই শিঙাড়া বিক্রির রোজকার দিয়েই চলে তার পাঁচ সদস্যের সংসার।

খবর নিয়ে জানা গেছে, দিনেশ কুমার দাস (৬১) উপজেলার শেখর ইউনিয়নের তেলজুড়ি (পুরোনো বাজার) গ্রামের বাসিন্দা। এ পেশায় তিনি ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়োজিত। ১৯৮৯ সালের দিকে তিনি নিজ বাড়িতে শিঙাড়া তৈরি করে বিভিন্ন পল্লীগ্রামের মাঠে-ঘাটে বিক্রি শুরু করেন। প্রতি পিস শিঙাড়া তিনি শুরুতে এক টাকা করে বিক্রি করতেন। এরপর দুই টাকা, তিন টাকা। এখন সবকিছুর দাম বাড়তি, তাই বর্তমানে প্রতি পিস শিঙাড়ার দাম চার টাকা।

প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মতভাবে দিনেশ দাস নিজেই শিঙাড়া তৈরি করেন। এরপর ঝুড়িভর্তি শিঙাড়া মাথায় নিয়ে নেমে পড়েন গ্রামের মাঠে-ঘাটে। তার শিঙাড়া খেতে বেশ সুস্বাদু। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫শ পিস শিঙাড়া বিক্রি করেন তিনি। আর এতে সব খরচ বাদে ৫ থেকে ৬শ টাকা আয় হয়। সামনে পেঁয়াজ তোলার মৌসুমে ৬ থেকে ৭শ পিস শিঙাড়া বিক্রি হবে। তখন লাভও বেশি হবে। তবে তিনি হাটে-বাজারে বিক্রি করেন না। গ্রামের সাধারণ মানুষ ও ক্ষেতে-খামারে কাজ করা কৃষক-শ্রমিকরাই তার ক্রেতা।

শিঙাড়া বিক্রেতা দিনেশ কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকালে আমি নিজে বাড়িতে বসে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শিঙাড়া তৈরি করি। এরপর তা নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও ক্ষেত-খামারে কাজ করা কৃষক-শ্রমিকদের মাঝে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। হাট-বাজারে গিয়ে আমি বিক্রি করি না। কারণ ক্ষেতে কাজ করা কৃষক-শ্রমিকদের পেটে ক্ষুধা লাগলেও কাজ ফেলে হাট-বাজারে গিয়ে কিছু কিনে খাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই আমি তাদের কাছে ছুটে যাই। তারাও হাতের নাগালে পেয়ে বেশ খুশি মনে কিনে খান।

তিনি আরও বলেন, এটা আমার ব্যবসা হলেও মূলত আমি তাদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আয় করি। আর তা দিয়েই সংসার চালাই। একটাকা থেকে শুরু,তখন তেলের দাম ছিল মাত্র ১৯ টাকা কেজি। এখন ১৪০ টাকা লিটার যার কারণে চার টাকা করে বিক্রি করতে হয়। এভাবে ৩৫ বছর ধরে চলছে। আমার শিঙাড়া খেয়ে সবাই প্রশংসা করে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা লিটন শেখ জাগো নিউজকে বলেন, দিনেশ দাস কোনো হাট-বাজারে বিক্রি করেন না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি গ্রামাঞ্চলের ক্ষেতে-খামারে কাজ করা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। গরম গরম, মচমচে শিঙাড়ার সঙ্গে তিনি বিনামূল্যে কাঁচা মরিচ দেন। কৃষকদের কাছে দিনেশ দাস ও তার শিঙাড়ার সুনাম রয়েছে।

বামনগাতী মাঠে কাজ করা কৃষক লিটন শেখ বলেন, দিনেশ দাস দীর্ঘ বছর ধরে এভাবে শিঙাড়া বিক্রি করেন। লোকও ভালো, টাকা না থাকলেও তিনি সিংগাড়া দেন। অত্র অঞ্চলের কৃষকের মাঝে তার শিঙাড়ার বেশ কদর রয়েছে।

রাজমিস্ত্রী নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মাঠের মধ্যে কাজ চলছে। আশপাশের বাজার নেই। বাজারের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। কাজ ফেলে বাজারে যাওয়া সম্ভব হয় না। পথের মাঝে, হাতের কাছে দেখা হলেই কেনা হয় তার শিঙাড়া। শ্রমিকরা খেয়ে পানি খেয়ে আবার কাজে লেগে যায়।

এ বিষয়ে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমেদ বলেন, দিনেশ দাস একজন ভালো ও পরপোকারী মানুষ। তিনি গ্রামের মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারে কাজ করা কৃষক-শ্রমিকদের মাঝে ঘুরে ঘুরে শিঙাড়া বিক্রি করেন। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তিনি খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিকদের এক ধরনের সেবা প্রদান করছেন। যদি তার কোনো সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।