মোগল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘বজরা শাহী মসজিদ’

ইকবাল হোসেন মজনু ইকবাল হোসেন মজনু , নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৪

মোগল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা শাহী মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি বজরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে (১১৫৪ হিজরি ও বাংলা ১১৩৯ সন) মোগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে বজরার জায়গিরদার পারস্য দেশীয় পীর মিয়া আম্বর শাহের নির্দেশে আমানুল্লাহ ও ছানাউল্যা ৩০ একর জমিতে দিঘি খনন করে তার পাশেই নান্দনিক এ স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ২৬ বছর।

মসজিদটির আয়তন ১১৭ দশমিক ১২ বর্গমিটার (১৬ মিটার × ৭.৩২ মিটার)। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। বাইরের চার কোনায় অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। পূর্বদিকে তিনটি, উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। দরজার বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং দরজার উভয় পাশে রয়েছে সরু মিনার।

মোগল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘বজরা শাহী মসজিদ’

পূর্বদিকের তিনটি দরজা বরাবর কিবলা দেওয়াল রয়েছে। যার অভ্যন্তরে রয়েছে তিনটি মেহরাব। যা অত্যন্ত কারুকার্যময়। মাঝের মেহরাবটি অন্য দুটির তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড়।

মসজিদের পূর্বদিকের মধ্যের দরজায় একটি ফারসি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম লেখা রয়েছে। স্থাপনাটির চার কোণে চারটি সুন্দর মিনার রয়েছে, যা এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণে মোগল স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদের পূর্বদিকে আছে বিরাট তোরণ। তোরণের দোতলার ওপরে রয়েছে মনোরম উঁচু মিনার। এর সৌন্দর্য ও অলংকরণের জন্য চীন দেশীয় গ্লাস কেটে মসজিদের গায়ে লাগানো হয়। যা এখনো নান্দনিক স্থাপত্যশৈল হিসেবে বিরাজমান।

মোগল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘বজরা শাহী মসজিদ’

মসজিদের অভ্যন্তরীণ দুটি কক্ষ আছে যা বহুখাঁজবিশিষ্ট আড়াআড়ি খিলান দ্বারা তিন ভাগে বিভক্ত। ছাদের ওপর তিনটি কন্দাকৃতির গম্বুজ আছে যা অষ্টকোণাকার। এগুলোর শীর্ষ পদ্ম ও কলস চূড়া দ্বারা সজ্জিত।

১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটির ব্যাপকভাবে মেরামত করেন বলে জানা গেছে। এসময় সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় মসজিদটি।

পরে ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ শুরু করে। বর্তমানে এটি ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুরক্ষিত স্থানগুলোর তালিকায় রয়েছে। দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের একটি এই বজরা শাহী মসজিদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

বজরা শাহী মসজিদটি দেখতে আসা কোম্পানীগঞ্জের শাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক পুরোনো এ মসজিদটি আমাদের জেলায় অবস্থিত। রমজানে এখানে এসে নামাজ আদায় করলাম। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন। মসজিদের কারুকার্য দেখে অনেক ভালো লাগছে।’

মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান ছিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৯০৯ থেকে ১৯২৭ সাল সময়ের মধ্যে সিরামিক দিয়ে মসজিদটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। জমিদাররা বংশানুক্রমে এ মসজিদের মোতাওয়াল্লি ছিলেন। জমিদার প্রথা উঠে যাওয়ার পর এখন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মসজিদটি পরিচালনা করে আসছেন।’

‘বজরা শাহী মসজিদ’-এ যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাওয়ার পথে মহাসড়কের সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা বাজারে গাড়ি থেকে নামতে হবে। পরে মূল সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে অথবা রিকশায় করে কয়েক মিনিট এগোলেই মসজিদ। আর নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের এ স্থানে যাওয়া যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা বাসে করেও।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।