গাইবান্ধায় দুই যুগ ধরে বন্ধ ৫ রেলস্টেশন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৬:৩০ পিএম, ২১ মে ২০২৪

গাইবান্ধায় দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে পাঁচ রেলস্টেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে স্লিপার, ফিসপ্লেট, নাট-বল্টু ও লোহার ইস্পাত জং ধরে নষ্ট হওয়াসহ বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে। পাশাপাশি রেলের জমিতে গড়ে উঠছে ব্যক্তি মালিকাধীন ভবন।

বন্ধ স্টেশনগুলো হলো-তিস্তামুখঘাট, ভরতখালী, বালাসীঘাট, আনন্দবাজার ও কঞ্চিপাড়া। এ পাঁচ স্টেশনের দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। এ রুটে রেলওয়ে ফেরি বন্ধ থাকায় স্টেশনগুলোও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গাইবান্ধায় দুই যুগ ধরে বন্ধ ৫ রেল স্টেশন

সরেজমিন দেখা যায়, তিস্তামুখঘাট হতে ভরতখালী স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ দখল করে ইতিমধ্যে বাড়িঘর নির্মাণ হয়েছে। আবার অনেকেই লাইনের ওপর দোকান ঘর করেছন। এতে বেহাত হয়েছে রেলের কোটি টাকার সম্পদ। ভরতখালী স্টেশনের ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। লাইনগুলো মাটির নিচে চাপা পড়েছে। কলোনির জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি।

একই অবস্থা ত্রিমোহিনী-বালাসী রুটের। এ রুটের বালাসীঘাট, আনন্দবাজার ও কঞ্চিপাড়া স্টেশনের ঘর ও সরঞ্জামাদি সরানো হলেও লাইনের স্লিপার, ফিসপ্লেট, নাট-বল্টুসহ নানা সামগ্রি চুরি হয়ে গেছে। অনেক স্থানে লাইনের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গাইবান্ধায় দুই যুগ ধরে বন্ধ ৫ রেল স্টেশন

মধ্য কঞ্চিপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদ বলেন, দীর্ঘ দিন থকে ট্রেন না চলাই সরকারের কোটি টাকার মূল্যর সম্পদ নষ্ট ও চুরি হচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত নৌরুট চালু হয়। এজন্য সান্তাহার-লালমনিরহাট রেল রুটের সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া স্টেশন থেকে তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত ১২ কিলোমিটার (ইয়ার্ড লাইন) নতুন রেলপথ স্থাপন করা হয়। তখন থেকে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের মানুষের রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই নৌ রুট। ১৯৯৭ সালে নাব্য সংকটের কারণে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিমোহিনী থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পর তিস্তামুখঘাট থেকে বালাসীঘাটে ফেরি স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর বালাসীঘাটের গুরুত্ব কমে যায়।

গাইবান্ধায় দুই যুগ ধরে বন্ধ ৫ রেল স্টেশন

ব্রহ্মপুত্রের নাব্য হ্রাসের কারণে ২০১৬ সালে শেষবারের মতো বালাসী-বাহাদুরাবাদঘাটের রেলওয়ের ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পরিত্যক্ত হয়ে বেহাল অবস্থায় রয়েছে রেলওয়ের এ দুটি রুট।

তিস্তামুখ ঘাটের বাসিন্দা সাবেক রেল কর্মকর্তা মোত্তালেব হোসেন বলেন, ঘাটে ৩৪টি নৌযান ছিল। এর মধ্যে তিনটি প্যাসেঞ্জার স্টিমার, পাঁচটি টাগ, পাঁচটি ওয়াগন-ফেরি বার্জ, ছয়টি পন্টুন এবং ১৫টি ফ্লিট। ছিল ভাসমান কারখানা। বন্ধ ঘোষণা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো শতকোটি টাকার জাহাজগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয়েছে।

গাইবান্ধায় দুই যুগ ধরে বন্ধ ৫ রেল স্টেশন

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট লাইন ভেঙে নানা সামগ্রী সরিয়ে নিতে বলে। মেরিন বিভাগের সব ফেরি ও ইঞ্জিন নিলামে বিক্রি করতে বললে সে কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তবে রেললাইনের সামগ্রী সরাতে পারেনি

গাইবান্ধা স্টেশন ম্যানেজার মো. আবুল কাশেম বলেন, রেলের জনবল কম থাকায় বন্ধ থাকা স্টেশন চালু হচ্ছে না। আর ভবিষ্যতেও এগুলো চালুর সম্ভাবনা নেই। বন্ধ স্টেশনের লাইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ তাদের লোকজন জড়িত থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপরে জানানো ছাড়া এখানে আমার করার কিছুই নেই।

এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।