৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো
নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত। নীলফামারীর সদর লক্ষীচাপ ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোটিই এখন ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা। হাজারও প্রতিশ্রুতির পরেও নদীর ওপর এখনো পাকা সেতু নির্মাণ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, লোকজন সাইকেল ও মটরসাইকেল নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছেন। অনেকে আবার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও সাঁকো পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। সাবধানে চলাচল করছেন সবাই। কারণ এর আগে সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। একটু অন্যমনস্ক হলে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ, কাচারী, শিশাতলী, জংলীপাড়া, দুবাছুরি, বল্লমপাঠ, কচুয়া ও দাঁড়িহারা জলঢাকা উপজেলার ডিয়াবাড়ী ও শিমুলবাড়ী গ্রামের মানুষজন বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন নীলফামারী জেলা শহর, ডোমার উপজেলা শহর ও জলঢাকা উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া এই তিন উপজেলা শহরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। পাকা সেতু না থাকায় ভীষণ সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা।
জংলীপাড়ার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষাকালে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই স্থানে একটি সেতুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েও কোনো সুফল পাননি।
স্থানীয় বাসিন্দা ললিত চন্দ্র রায় একরাশ ক্ষোভ নিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর আমার ছেলে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। কৃষকদের যতো মালামাল এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।
তিনি আরও বলেন,‘আমাগো দুঃখকষ্টের কথা কেউ শোনে না। বর্ষার সময় সাঁকোটি পার হওয়া অনেক কষ্টের। নদীতে তখন স্রোত থাকে। তখন সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। আমগর কষ্ট কেউ বুঝে না। বহু বছর ধরে শুনি, এখানে সেতু হবে। কিন্তু কখনো আর সেতু হলো না। আর হবে কি না, সেটাও জানি না।’

বসুনিয়ারডাঙ্গা গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ রায় জাগো নিউজকে বলেন, স্বাধীনতার পর ভারত থেকে ফিরে আসার পর শুনি ব্রিজটি হবে, কিন্তু আজও হয়না। প্রতিবার ভোটের সময় ওই ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের বিষয়টি ওঠে। ভোট ফুরালে আর কারও দেখা মেলেনা। পাকা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে এলাকার সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসনকে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই।
মটরসাইকেল আরোহী বিপ্লব রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার বাসা নদীর ঐ পাড়ে তাই আমাকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়া যায় না। ছেলে মেয়েরা বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে পারে না। সেতুর অভাবে রোগীদের পড়তে হয় সবচেয়ে দুর্ভোগে।
কাচারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিতা রানী রায় জাগো নিউজকে জানান, কষ্ট করে সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় পানিতে পড়ে আমাদের বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়।
লক্ষীচাপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে থাকেন। তিনি বলেন, ব্রিজটি হলে হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমি এলজিইডি অফিসে অনেকবার যোগাযোগ করেছি।
নীলফামারী স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ কবির জাগো নিউজকে বলেন, একটি প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ওই স্থানে একটি ব্রিজ করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি খুব দ্রুত হয়ে যাবে।
আইএস/এসআইটি/এমএস