সাতক্ষীরায় বেইলি ব্রিজ ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বেত্রবতী নদীতে পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে পড়েছে একটি বেইলি ব্রিজ ও দুটি কাঠের সেতু। এতে কলারোয়া উপজেলা সদর ও পৌর সদরের সঙ্গে পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড ও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া কলারোয়ার সঙ্গে যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও ঝিকরগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে একে একে এসব সেতু ও কাঠের সাঁকো ভেঙে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টার দিকে কলারোয়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র পশুর হাট মোড়ের পাশে অবস্থিত বেত্রবতী নদীর ওপর লোহার বেইলি ব্রিজটি ধসে গেছে। এরপর কলারোয়া তরকারি বাজার সংলগ্ন বাঁশ কাঠের সাঁকোটি মাঝখান থেকে ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই নদীর ওপর পৌরসভাধীন গোপীনাথপুর এলাকায় তারকনন্দী কাঠের সেতুটিও পানির তোড়ে ভেঙে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কলারোয়া সদরের বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ জানান, উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া বেত্রবতী নদীর উভয় পাশে ছয়টি করে মোট ১২ ইউনিয়ন রয়েছে। এতে পূর্ব পাশের ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডের সঙ্গে পশ্চিম পাশের কলারোয়া উপজেলা সদর ও পৌর সদরসহ ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে উপজেলার ওই ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার তিন ওয়ার্ডের মানুষ সহজে আর কলারোয়া উপজেলা সদরে আসতে পারছেন না। তেমনি নদীর এপারের ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের মানুষ ওপারে যেতে পারছেন না। এখন নদী পারাপার ও ওই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ রয়েছে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মুরারীকাটি পাকা ব্রিজ। ওই ব্রিজ দিয়ে বেশ সময়ও লাগছে ও অনেক পথ ঘুরতে হচ্ছে।
কলারোয়ার বাসিন্দা আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, গত বছরের আগস্টে বেত্রবতী নদীর ওপর ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ফলে পুরোনো ব্রিজ ভেঙে যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে পাশে লোহার বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হয়। সেই বেইলি ব্রিজটিই হয়ে পড়ে উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ ওয়ার্ডের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। বৃহস্পতিবার সকালে সেই ব্রিজটি পানির তোড়ে ধসে রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে, পৌরসদরের তরকারি বা কাঁচাবাজার এবং মাছ বাজার সংলগ্ন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত আরেকটি সাঁকো কিছু দিন আগে ভেঙে গেলে সম্প্রতি তা যাতায়াতের উপযোগী করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে নদীর পানির স্রোতে সেই কাঠের সাঁকোটিও মাঝখান থেকে ভেঙে যায়।
অপরদিকে, পৌরসভাধীন গোপিনাথপুর তারকনন্দী নামক স্থানের আরেকটি কাঠের বড় সেতুটির বিভিন্ন স্থান ও মাঝ বরাবর ভঙুর হয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখান দিয়ে কোনোরকম মানুষজন পায়ে হেটে পার হতে পারছেন। তবে যে কোনো সময় ওই সেতুটিও ভেঙে যেতে পারে। এতে নদী পারাপারে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সেতুটি পরিদর্শন শেষে কলারোয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কান্তি দাশ ও সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, পৌরসভাধীন দুটি সাঁকো বা সেতু দ্রুত সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বেইলি ব্রিজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন। সেটাও দ্রুত যাতায়াত উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার পারভেজ জাগো নিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কলারোয়ার বাজার এলাকায় ভেঙে পড়া সেতুটি তিনি দেখে এসেছেন। যেহেতু নতুন সেতুর কাজ চলমান, সেজন্য সেখানে বেইলি সেতু করতে হবে। শুক্রবার বিকেল বা শনিবার থেকে সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
আহসানুর রহমান রাজীব/জেডএইচ/এমএস