‘প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সাব স্ট্যান্ডার্ড আর ভেজাল এক নয়'

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক মোয়াজ্জেম হুসাইন বলেছেন, যে কোনো প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের গুণগত মানের ক্ষেত্রে সাব-স্ট্যান্ডার্ড আর ভেজাল এক জিনিস নয়। সবাইকে বিষয়টি বুঝতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী সপ্তম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর টেকনিক্যাল সেশনে তিনি এ কথা বলেন।

মোয়াজ্জেম হুসাইন বলেন, দেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য বা ফুড প্রসেসিং খাত ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন বিষয়টিও প্রশংসিত। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, ফুড প্রসেসিং কার্যক্রমের সঙ্গে বিএসটিআইও কাজ করে এ খাতকে এগিয়ে নিতে চায়। অনেক সময় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের কোনো কিছুর বিষয়ে অনেকে নেগেটিভ কথা বলেন। কিন্তু আসলে এটা ঠিক নয় এতে সংশ্লিষ্টদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। নামি দামি কোম্পানিগুলোর এসব পণ্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের। এখানেই আমাদের বুঝতে হবে প্রসেসিং খাদ্যপণ্যের গুণগত মানের ক্ষেত্রে সাব স্ট্যান্ডার্ড বা বিলো স্ট্যান্ডার্ড আর ভেজাল এক জিনিস নয়। যে কারণে এমন মন্তব্যের আগে বিষয়টি বুঝতে হবে, এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান ব্যাপকভাবে রাখছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় বিএসটিআই।

সেশনটিতে বক্তারা বলেন, কৃষি সেক্টরের ক্রমবর্ধমান বিকাশ নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে ফুড প্রসেসিং প্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসনীয়। যেহেতু ফুড প্রসেসিং সেক্টর এবং এর সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের বিকাশ এবং সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।

টেকনিক্যাল এ সেশনে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী। এছাড়া সেশনে উপস্থিত ছিলেন এসিআই লিমিটেডের ডেপুটি এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর অরুপ কুমার সাহা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রেশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হুসাইন, সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী, বিএফএসএ-এর সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম, বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম এ রহিম প্রমুখ।

এর আগে সকালে তিন দিনব্যাপী সপ্তম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০১৯ শুরু হয়। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক মেলার উদ্বোধন করেন। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের সর্ববৃহৎ এ মেলা চলবে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত।

মেলা প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। মেলায় প্রদর্শনী ছাড়াও কারিগরি সেশনে থাকবে দেশ-বিদেশের এ খাতে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি। থাকছে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থা। মেলায় প্রায় ১৫ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড এ মেলার আয়োজন করে। এ মেলার সঙ্গে ‘নবম এগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৯’ এবং ‘৬ষ্ঠ রাইস অ্যান্ড গ্রেইনটেক এক্সপো-২০১৯’ নামে আরও দুটি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রসেসিং সেক্টরে যুক্ত দেশি-বিদেশি এমন বিভিন্ন কোম্পানি মেলায় অংশ নিয়েছে। ইতোপূর্বে ছয়বার অনুষ্ঠিত এ মেলার আশাতীত সাফল্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও দর্শনার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় এবারের মেলার সাফল্য নিয়েও আশাবাদী আয়োজকরা।

আয়োজকরা জানান, জন্মলগ্ন থেকেই বাপা ফুড প্রসেসিং সেক্টরের উন্নয়নের স্বার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাপার মূল লক্ষ্যই হলো এ সেক্টরের ক্রমবর্ধমান বিকাশ নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্বায়নের এ যুগে আগত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যতীত যেকোনো খাতে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ। কাজেই বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই এ খাতে পিছিয়ে না যায় সে ব্যাপারে বাপা সদা সচেষ্ট। ফুড প্রসেসিং সেক্টর এবং এর সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ও সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান করতে বাপা সদা সচেষ্ট।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৩ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাপা। বর্তমানে বাপার সদস্য সংখ্যা ৩০০, যারা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বিশ্বের ১৪৪ দেশে রফতানি করে চলেছেন। বিগত অর্থবছরে খাদ্য রফতানির মাধ্যমে বাপার সদস্যরা ৩৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন। এ রফতানির পরিমাণ ২০২১ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে বাপা বদ্ধপরিকর।

আয়োজকরা বলছেন, যেহেতু এ সেক্টরে বাপা আয়োজিত এটি একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের মেলা, সেহেতু মেলার প্রচার এবং প্রসারে বাপা বদ্ধপরিকর। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং সেক্টরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে এই ধরনের মেলা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আয়োজকরা আশাবাদী যে, সময়ের সঙ্গে এ মেলার পরিসর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রসার এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচয় করানোই এ মেলার অন্যতম লক্ষ্য।

এএস/এএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।