আতঙ্কের বাজারে কোহিনুরের ‘ঝলক’
মহামারি করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মার্চ মাস জুড়েই শেয়ারবাজারে একের পর এক বড় ধস নামে। টানা ধসের মধ্যে পড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
একের পর এক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতনে যখন বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা, তখন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান কোহিনুর কেমিক্যাল। আতঙ্কের বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো ঝলক দেখিয়েছে কোহিনুর কেমিক্যালের শেয়ার।
ফলে অন্য কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা যখন কত লোকসান হলো সেই হিসাব কষছিলেন, তখন কোহিনুরের শেয়ারহোল্ডাররা ব্যস্ত ছিলেন মুনাফার হিসাব করতে। করোনা আতঙ্কের মধ্যে মার্চ মাসজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭০ টাকা ২০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৪১ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিয়মিত শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দেয়া কোহিনুর কেমিক্যালের শেয়ার দাম গত ২ বছরের মধ্যে কখনও ৩০০ টাকার নিচে নামেনি। এর মধ্যে শেয়ারের দাম সবথেকে কম ছিল চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। ওইদিন কোহিনুর কেমিক্যালের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩০৭ টাকা ২০ পয়সা।
এরপর থেকেই আবার শেয়ারের দাম বাড়া শুরু হয়, যা করোনা আতঙ্কও থামাতে পারেনি। এমনকি করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ১২ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ৫১৭ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর কিছুটা দাম কমে শেয়ারবাজার লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে ২৫ মার্চ ৪৭২ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়।
এ হিসাবে চলতি বছরের তিন মাসে কোহিনুর কেমিক্যালের প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৬৫ টাকা ৬০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৩৪ কোটি ২২ লাখ ২২ হাজার টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বরের চীনে প্রথম করোনাভাইরাস আঘাত হানে। বাংলাদেশ প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় মার্চের ৮ তারিখে। দেশের ভেতরে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হয় ১২ কার্যদিবস।
এই ১২ কার্যদিবসেই কোহিনুর কেমিক্যালের শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ করোনা আতঙ্ক কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা রুখতে পারেনি, উল্টো দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ‘কোহিনুর কেমিক্যালের শেয়ারের দামের চিত্র দেখলে দেখা যাবে প্রতিনিয়ত কোম্পানিটির শেয়ার দাম সাড়ে তিনশ টাকার ওপরে থেকেছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি শেয়ার দাম কমে ৩০৭ টাকায় নেমে আসে। এভাবে দাম কমার পর দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে করোনা আতঙ্কে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম যেভাবে কমেছে, সেখানে বড় ধরনের দাম বাড়া অবশ্যই বিস্ময়ের। আমার ধারণা, নিয়মিত ভালো লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।’
১৯৮৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোহিনুর কেমিক্যালের লভ্যাংশের বিষয়ে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ২০১২ সাল থেকে তথ্য রয়েছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। তার আগের বছর ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়।
এছাড়া ২০১৭ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস, ২০১৫ সালে ৩০ শতাংশ নগদ, ২০১৪ ও ২০১৩ সালে ২৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং ২০১২ সালে ৩০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
২০ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রতিষ্ঠান কোহিনুর কেমিক্যালের মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ১ লাখ ৮২ হাজার ৫০০টি। এই শেয়ারের ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এমএএস/এসআর/জেআইএম