বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড
২৭.৫ শতাংশ কর আরোপে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

চলতি অর্থবছর থেকে বেসরকারি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এই আয়ের ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। চলতি বছর আয়কর আইনে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর আরোপের এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং করছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও আয়কর আইনে সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডগুলোকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিধানটির সমালোচনা করছেন অনেকে।
আয়ান আহমেদ নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘আইন যদি করতে হয় তা সরকারি এবং বেসরকারির জন্য সমানভাবে করতে হবে, নয়তো এ আইন প্রহসন মাত্র। সর্বোপরি এনবিআরের এই অদূরদর্শী আইন বাতিল চাই। প্রভিডেন্ট ফান্ড করমুক্ত থাকুক, কারণ এটি একজন চাকরিজীবীর আজীবনের গচ্ছিত শেষবেলার পাথেয়।’
আরও পড়ুন>> দেরিতে আয়কর রিটার্ন জমা দিলে জরিমানা বাড়ছে
নাজিম উদ্দিন নামের আর ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বেসরকারি চাকরিজীবীদের জীবনের শেষ সম্বল প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর আরোপ খুবই অযৌক্তিক। সরকারের আয় বা কর আদায় বাড়ানোর আরও অনেক যৌক্তিক উপায় রয়েছে। এই চাকরিজীবিদের প্রতি মাসের বেতন থেকে ইনকাম ট্যাক্সের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখা হয় এবং যথাসময়ে রিটার্ন সাবমিটের মাধ্যমে তারা কর আদায় করে থাকেন, যেখানে দেশের অনেকে লাখ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছেন। একজন চাকরিজীবীর শেষ জীবনের সামাজিক নিরাপত্তা ফান্ড হচ্ছে এই প্রভিডেন্ট ফান্ড। এর ওপর ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর বসানো খুবই দুঃখজনক। আশাকরি সরকার এই নীতি দ্রুত বাতিল করবেন।’
এ বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর চন্দন আজিজ নামের সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তার পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। হাজার হাজার রিঅ্যাকশন ও শেয়ার হওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১২ বছর কাজ করেছি আমি। মনে আছে, প্রভিডেন্ট ফান্ডের শেষ বছরের আয় হিসেবে ৮৭ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। এই কালো আয়কর আইন বহাল থাকলে শুধু শেষ বছরে আমাকে এই ৮৭ হাজার টাকার ওপর কর দিতে হতো ২৪ হাজার টাকা। আদমশুমারিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। বাংলাদেশে পারসোনাল ট্যাক্স দেয় ২৮ লাখ মানুষ; ২ শতাংশেরও কম। এই ২৮ লাখ মানুষকে পিষে চ্যাপ্টা করে দেওয়ার মিশন নিয়েছে এনবিআর। এদের হাতের মধ্যে পেয়ে আরও বেশি করে চিপার (চেপে ধরা) সব সুযোগ নির্বিচারে কাজে লাগাচ্ছে তারা। সর্বশেষ উদাহরণ এই পিএফ এর ইনকামের ওপর ২৭ ৫০ শতাংশ ট্যাক্স বসানো।’
আরও পড়ুন>> আয়কর রিটার্নে যেভাবে দেখাবেন সঞ্চয়পত্রের সুদ
তিনি আরও লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। এটাকে উন্নত করার জন্য ট্যাক্স নেট বিস্তৃত করতে হবে। আরও বেশি মানুষ, আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে হবে। সেটা না করে গুটিকয়েক ফেঁসে যাওয়া কর প্রদানকারীকে আরও চিপলে তেমন কোনো লাভ হবে কি?’
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেসরকারি খাতের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা কম। কারণ প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ তহবিল থেকে খুব কমই সামাজিক সুরক্ষা পাওয়া যায়। কর আরোপের ফলে বৈষম্য বাড়বে। বেসরকারি ও সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের মধ্যে কর আরোপের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখা ঠিক হবে না।’
এসএম/ইএ/এমএস