চামড়া খাতের ঋণে ব্যাংকের অনাগ্রহ

ইয়াসির আরাফাত রিপন
ইয়াসির আরাফাত রিপন ইয়াসির আরাফাত রিপন
প্রকাশিত: ০৫:৩৪ এএম, ০৫ জুন ২০২৪
ফাইল ছবি

সাধারণত প্রতি বছর দুই শতাংশ রেওয়াতি সুবিধার মাধ্যমে চামড়া খাতে ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়া খাত ব্যবসায়ীদের ঋণের চাহিদা রয়েছে। তবে বিশেষ সুবিধায় ব্যবসায়ীদের ব্যাংকগুলো মাত্র ২৭০ কোটি টাকা ঋণ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

অনানুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া ব্যাংকগুলোর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত প্রক্রিয়াগত জটিলতায় এবার চামড়াখাতের ঋণ বিতরণ নাও হতে পারে। আর বিশেষ সুবিধায় ঋণ বিতরণ না হলে চামড়া সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালে চামড়া খাতের জন্য মাত্র দুই শতাংশ এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিল করে ১০ বছরের জন্য ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। গত বছর সেই সুযোগে ব্যাংকের ঋণ বরাদ্দ ছিল ২৫৯ কোটি টাকা, ২০২২ সালে ছিল ৪৪৩ কোটি। আর ২০২১ সালে ছিল ৬১০ কোটি, ২০২০ সালে ৭৩৫ কোটি এবং ২০১৯ সালে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চামড়াখাতে সবমিলিয়ে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর এ খাতের খেলাপি ঋণ প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। খেলাপির প্রায় ৯০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

আরও পড়ুুন

ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহের বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যাংকগুলো ২৭০ কোটি ঋণ দিতে আগ্রহী, যা মোটও যথেষ্ট নয়। এজন্য গ্রাহক-ব্যাংকে সম্পর্কের বিশেষ ছাড়ে ঋণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ চলমান। এখনো ঈদের সময় রয়েছে, আমরাও চেষ্টা করছি। নগট ঋণ সহায়তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েব। তবে ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহের কয়েকটি কারণ হতে পারে। তার মধ্যে একটি হতে পারে ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার পর যথাসময়ে পেমেন্ট দিতে পারেননি হয়তো। তাছাড়া ব্যাংকের তারল্য সংকটও একটা কারণ হতে পারে।

বিটিএ চেয়ারম্যান বলেন, চামড়া পচনশীল পণ্য হওয়ায় দ্রুত সংগ্রহ করতে হয়, আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি সংরক্ষণও করতে হয়। দেশের বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ঈদ মৌসুমে খণ্ডকালীন চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন আড়তদাররা। ট্যানারি মালিক নিজস্ব মূলধন দিয়ে সারাবছর ব্যবসা করে থাকেন। তবে কোরবানির সময় বেশি চামড়া কিনতে বাড়তি নগদ অর্থের জন্য বিশেষ ঋণ প্রয়োজন হয়।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারক মিলিয়ে বিটিএ’র সদস্য প্রায় আটশোর মতো। সারাদেশে বৃহৎ ও মাঝারি আড়ত রয়েছে এক হাজার ৮৬৬টি। এর বাইরেও অসংখ্য ছোট আড়ত রয়েছে, যারা মৌসুমি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ঈদুল আজহার সময় চামড়া সংগ্রহ করে থাকে।

আরও পড়ুুন

আড়তদার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁচা চামড়ার সিংহভাগ সংগৃহীত হয় ঈদুল আজহায়। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও গত বছরে এ খাত থেকে পায় এক দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকদের ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা ঋণ পাচ্ছেন না। আমরা পর্যাপ্ত টাকা পেলে চাড়া নষ্ট কম হতো।

চামড়া ব্যবসায়ীদের দেওয়া খেলাপি ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি জনতার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ট্যানারি ব্যবসাীয়দের একটা অংশ ঋণ পরিশোধ করেন না। আবার তারা দুই শতাংশ দিয়ে ঋণ নবায়নও করতে চান না। এসব কারণে ঋণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও বিরতরণ করা সম্ভব হয় না।

এর আগে সোমবার (৩ জুন) সচিবালয়ে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে চামড়ার নতুন মূল্য ঘোষণা করা হয়। প্রথমবারের মতো দেশে প্রতি পিস কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যে গরুর দাম এক লাখ টাকার মধ্যে বা যে চামড়ার সাইজ ২০ ফুটের মধ্যে, ঢাকায় তার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা।

প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের পাশাপাশি বর্গফুট হিসাবেও দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার ঢাকার মধ্যে কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এতে গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম বাড়লো পাঁচ টাকা।

সেই সঙ্গে ঢাকার মধ্যে কোরবানি গরুর চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

অন্যদিকে খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছর ঢাকার মধ্যে কোরবানি গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা।

ইএআর/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।