ঢামেকে বিনামূল্যে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার


প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিনামূল্যে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হচ্ছে। বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন গর্ভবতী মায়ের সফল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হলেও রোগীর স্বজনদের কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হয় না।  

এমনটা দাবি করে হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের শতভাগই হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

তার দাবির সত্যতা যাচাইয়ে সোমবার দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে আলাপকালে পরিচালকের এ দাবির শতভাগ না হলেও সিংহভাগেরই প্রমাণ পাওয়া যায়।

রোগীর স্বজনরা জানান, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও খুবই স্বল্প মূল্যের জরুরি কিছু সংখ্যক ওষুধ ছাড়া উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ওষুধও হাসপাতাল থেকেই নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে। এতো সস্তায় সফল সিজারিয়ন অস্ত্রোপচার দেশের কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালেই হয় না বলে জানান তিনি।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ছোট বড় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন গর্ভবতী নারীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হলে হাসপাতালে দুই থেকে তিনদিন থাকা, খাওয়া দাওয়াসহ সর্বনিম্ন ১৫ হাজার থেকে এক লাখেরও বেশি টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়। খরচ বেশি হওয়ায় অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রোগীদের সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হয়।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মাতবর বাজারের বাসিন্দা প্রেস কর্মচারী আনিস আহমেদ তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী শিউলিকে দেখানোর জন্য আজিমপুর মেটার্নিটিতে কার্ড করেছিলেন। এ মাসেই বাচ্চা হবে জানিয়ে প্রসব বেদনা উঠলে দ্রুত সেখানে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা।

গতকাল তার প্রসব বেদনা উঠলে আনিস তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসক মেপে উচ্চমাত্রার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে বলে দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে মেটার্নিটিতে নেয়া হলে জটিল কেইসের দোহাই দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেন। আজ সকালে গাইনি ইমাজেন্সিতে তার কোলজুড়ে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

সোমবার দুপুরে গাইনি ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে আলাপকালে শিউলির বোন হীরা জানান, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও টুকটাক ওষুধপত্র ছাড়া তাদের কোনো প্রকার টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়নি। তবে প্রথম সন্তান জন্মদানের খুশিতে আয়াদের বকশিস দিয়েছেন।


রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাবরিনা হক গতকাল (রোববার) গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। আজ (সোমবার) সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের কোলজুড়ে ছেলে শিশু আসে।
 
কত খরচ হয়েছে? কী কী কিনতে হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আজ সকালে ওটি থেকে দেয়া একটি স্লিপে তিনি সাড়ে ৫শ’ টাকার ওষুধ কিনেছেন। তালিকায় স্টেরাইল স্যানিটারি ন্যাপকিন, নিকচি পোর ২ ইঞ্চি, টেস্ট টিউব, এনসিসি, কর্ড ক্লাম্প লেখা ছিল। সঙ্গে থাকা ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর জানান, ন্যাপকিনটি হাসপাাতল থেকে কখনও দেয়া হয় না। আর যেগুলোর নাম লেখা আছে সেগুলোর দু`একটি সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক সময় রোগী ডাক্তারকে বেশি দামের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ কিনে দিতে প্রলুব্দ করে। তবে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন যেন কোনোভাবেই রোগীর পকেটের টাকা খরচ না হয়। তবে সংঘবদ্ধ দালাল ও প্রতারকচক্রের খপ্পরের শিকার হয়ে কিছু কিছু রোগীকে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।  

এমইউ/এসকেডি/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।