ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় মেলায় শিক্ষার্থীদের ঢল

সারাবিশ্বে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র। সেটি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় মেলায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩১টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আয়োজনে এ মেলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঢল নেমেছে। মেলায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ ঘুরে তথ্য নিচ্ছেন।
মেলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্কুল কাউন্সেলররা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কর্মকর্তাদের সাথে মুখোমুখি আলাপের সুযোগ পান।
এছাড়া দর্শনার্থীরা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং এডুকেশন ইউএসএ উপদেষ্টাদের পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া জানতে সেশনে অংশ নেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে, ২০০টিরও বেশি দেশের ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫১৯ জনের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) হোটেল শেরাটনে মেলার উদ্বোধন করেন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স নেথান ডি. ফ্লুক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। দুই দেশের মধ্যে গতিশীল শিক্ষার্থী, গবেষক, স্কলার ও শিক্ষাবিদ বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
নেথান ডি. ফ্লুক বলেন, প্রতি বছর এ দেশের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। ফলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানো শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৩তম। এ বিষয়েও আলোকপাত করেন তিনি।
মেলায় আসা একাডেমিয়া স্কুলের শিক্ষার্থী তামিমা জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা বাইরে আবেদন করতে চাচ্ছে, এ মেলা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্কুল থেকে এক রকম তথ্য পাই, আবার বিভিন্ন সূত্রে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পাই। বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এ মেলায় আসা। তাদের কাছ থেকে আমাদের পারসোনালি যে প্রশ্ন সেগুলো জিজ্ঞেস করছি, যেগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি আছে সেগুলো সঠিকভাবে জেনে নিচ্ছি। যেই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না তাদের ব্যাপারে আরও জানলাম, কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা আমাদের দিচ্ছে সেটিও জানতে পারছি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ধারণা ছিল সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা সবসময় সায়েন্স পড়বে। কিন্তু এখানে আসার পর ধারণা হলো কেউ সায়েন্সে পড়ার পর যদি ইচ্ছা হয় কমার্স নিয়ে পড়বে তারা সেটি অ্যালাউ করছে। তারা মনে করে একজনের মাইন্ড চেঞ্জ হতে পারে। এখানে কয়েক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে তারা খরচের ব্যাপারে নিজেদের মতো করে সুযোগ দিচ্ছে। এখানে অনেক ভালো হচ্ছে স্কলারশিপের ফ্যাসিলিটি আছে।
জানা গেছে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৩ হাজার ৩১৪ জন। সেখান থেকে বেড়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৯৭ জনে। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিগত শিক্ষাবর্ষে ১৪তম ছিল। এখন এক ধাপ এগিয়ে ১৩তম হয়েছে।
‘এ’ লেভেল শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ সমৃত সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় এসে যে তথ্য পেয়েছি, ওয়েবসাইটগুলোতে সেই তথ্য থাকে না। এগুলো আমার জন্য অনেক উপকারি মনে হয়েছে। আমার বড়ভাই যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছেন। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তত প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। এবং খরচও বেড়েছে অনেক। আমার ভাইয়ের সময় যে পরিমাণ টাকা লেগেছে এখন তার চেয়ে অনেক বেশি লাগছে। এটি একটু কমানো উচিত। তবে পড়াশুনার জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা ভালো জায়গা বলে মনে করি।
ইংলিশ মিডিয়াম থেকে ‘এ’ লেভেল শেষ করা ফোরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো। বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষে চাকরি পাচ্ছে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে গেলে যে কোনো একটি চাকরি পাবো।
যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিরা মেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন:
ক্যানেসিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাসকাডিয়া কলেজ, ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাম্পোরিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়-পাড়ডু বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিয়ানাপলিস, আইওয়া স্টেট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, লুইসিয়ানা টেক বিশ্ববিদ্যালয়, মার্সি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, নোভা সাউথ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ওল্ড ডোমিনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্যাসিফিক ওকস কলেজ, সিয়াটেল সেন্ট্রাল কমিউনিটি কলেজ, আলব্যানির স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক, বাফেলোর স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক, শিকাগো স্কুল অফ প্রফেশনাল সাইকোলজি, ট্রাইন বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়, সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়, বোল্ডারে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় - লোয়েল, মিশিগান ফ্লিন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয় - কলাম্বিয়া, হ্যাভন বিশ্ববিদ্যালয়, ওরিগন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় -মিলওয়াকি, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ংস্টাউন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, এবং ওয়েইন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী মেলায় অংশ নেন তিন হাজার জনেরও বেশি, যা ঢাকার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবচেয়ে বড় আয়োজন।
আইএইচআর/এমআইএইচএস/এএসএম