জসীম উদ্‌দীনের ‘কবর’: একশ বছরের দীর্ঘশ্বাস

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৫

কামরুল হাসান হৃদয়

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতা ২০২৫ সালে পূর্ণ করলো একশ বছর। পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীনের লেখা এই কবিতা আজও বাংলার মানুষের হৃদয়ে অম্লান এক স্মৃতি হিসেবে বেঁচে আছে। ১৯২৫ সালে কলকাতার ‘কল্লোল’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত কবিতাটি তখনকার সাহিত্যাঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করে। যখন আধুনিকতার ঢেউ বইছে শহুরে সাহিত্যে; তখন জসীম উদ্‌দীন ফিরেছিলেন গ্রামের সরল ভাষা ও জীবনধারায়।

‘কবর’ কবিতায় তিনি গ্রামের এক বৃদ্ধ দাদুর চোখ দিয়ে জীবনের শোক ও মৃত্যুর বাস্তবতা তুলে ধরেন। এ কবিতার কেন্দ্রে একজন দাদু, যিনি নিজের নাতিকে ডেকে জানান, তার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং ছোট ফুপুর মৃত্যুর কষ্ট—এবার তার নিজস্ব বিদায়ের পালা এসেছে। কবিতাটিতে নেই নাটকীয়তা বা বড় কোনো শব্দচয়ন বরং জীবনের সহজ অথচ গভীর বেদনার নিখুঁত চিত্রায়ন রয়েছে।

‘কবর’ কেবল একটি কবিতা নয়, এটি বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক প্রতিবিম্ব। এর ভাষা সরল ও স্বচ্ছ, যা পাঠকের হৃদয়ে সরাসরি পৌঁছে যায়। ষান্মাত্রিক মাত্রাবৃত্তে লেখা ১১৮ চরণের কবিতাটি একটানা পড়লে মনে হয় যেন কেউ জীবনের গল্প বলছেন—সত্যি, কষ্টসাধ্য কিন্তু আপসহীন।

আরও পড়ুন

প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক দীনেশচন্দ্র সেন একবার বলেছিলেন, ‘এ কবিতা দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনি।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জসীম উদ্‌দীনের গ্রামীণ আবেগের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করেছিলেন। তাই ‘কবর’ কবিতার ভাবনা মাটির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। শত বছর পেরিয়ে গেলেও ‘কবর’ কবিতার আবেদন কমেনি। এটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে নিয়মিত পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীরা কবিতাটিকে শুধু একটি সাহিত্যকর্ম হিসেবে নয় বরং মানুষের জীবনের কঠিন সত্য হিসেবে গ্রহণ করে।

২০২৫ সালের শতবর্ষ উদযাপনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে আলোচনা সভা, আবৃত্তি ও স্মরণসভা। কবিতাটি বর্তমানে লুৎফর রহমান রিটন সম্পাদিত ‘জসীমউদ্‌দীনের সেরা কিশোর কবিতা’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কবর’ কবিতার অঙ্গ অনুরণন প্রকাশ পাচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে। সময়ের পরিবর্তন হলেও মানুষের বেদনা ও শোকের ভাষা অপরিবর্তিত থেকে যায়—‘কবর’ সেই ভাষার এক অনন্য প্রতীক।

শত বছরের গণ্ডি পেরিয়ে এ কবিতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যগুলোই মাঝে মাঝে সবচেয়ে সহজ ভাষায় প্রকাশ পায়। দাদুর মুখ থেকে নাতির প্রতি একান্ত ভালোবাসা ও বিদায়ের গান আজও কাঁদায়, ভাবায়। ‘কবর’ তাই শুধু সাহিত্যকর্ম নয়, এটি মানুষের জীবন ও মৃত্যুর এক দীর্ঘশ্বাস। একশ বছর পরও এর বেদনা, মানবিকতা ও সাদামাটা ভাষা পাঠক হৃদয়ে অটুট। এটি বাংলা সাহিত্যের এমন এক রত্ন, যা সময়ের আঘাতেও অক্ষুণ্ণ।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।