দিল্লিতে আনন্দমুখর বাংলা বইমেলা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২৩

ফাত্তাহ তানভীর রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম দিল্লিতে বাংলা বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। লোভ সংবরণ করা মুশকিল! এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা না থাকায় একুশে বইমেলায় যাওয়া হয়নি। তাই ইচ্ছাটা আরও প্রবল হয়ে মনের ভেতর চাপ দিলো। নয়া দিল্লির বইমেলা ছিল চার দিনের।

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির পেশোয়া রোডের কমিউনিটি সেন্টারে বইমেলা হচ্ছিল। ঢুকতেই ডানে-বামে লক্ষ্য করলাম। তবে প্রথমেই সোজা ফুড কর্নারে গিয়ে ভুঁড়িভোজ সেরে নিলাম। সেখানে সমস্ত বাংলা খাবার। গরম ভাত, রুই মাছ, কপির সবজি, ভারী ডাল, টমেটোর চাটনি! এ খাবারের জবাব নেই। একদম বাঙালি খাবার। দিল্লিতে অনেক ধরনের খাবার খেয়েছি, এই স্বাদ কখনো পাইনি।

এরপর গেলাম বইমেলার স্টলে। স্টল ছিল ৪৪টি। অধিকাংশ স্টল কলকাতা কেন্দ্রিক। দু-একটা স্টলে কিছু বই ছিল ত্রিপুরার। তিনটি স্টল ছিল বাংলাদেশি লেখকদের। অন্য স্টলেও বাংলাদেশি লেখকদের বই ছিল; তবে তা উল্লেখ করার মতো নয়। শিলিগুড়ি, ঝাড়খন্ড বা আসামের বাংলা বই এ মেলায় ছিল কি না তা বোঝা যায়নি। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও কুড়িতম দিল্লি বইমেলা একটি আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় রূপ নেয়।

আরও পড়ুন: কলকাতা বইমেলায় সাদাত হোসাইনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস

স্টল ঘুরে এসে থামলাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মঞ্চের সামনে। সেখানে বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন লেখক ও কবি অমিত গোস্বামী। মঞ্চে সকাল থেকে শেষ অবধি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকগান, পাঠচক্র, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা বা সাহিত্য আলোচনা ভিত্তিক সাক্ষাৎকার চলে। আলোচনা হয় আধুনিক বাংলা প্রকাশনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়েও। নারীবাদী সাহিত্য, দলিত সাহিত্য মিথ, রূপান্তরের নাটক, গ্রাফিক্স নোবেল, বইয়ে অলংকরণ করার ভূমিকা নিয়ে আলোচকরা তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন। আলোচক ও অতিথিদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।

দিল্লিতে আনন্দমুখর বাংলা বইমেলা

প্রথমদিনে কুড়িতম দিল্লি বইমেলা উদ্বোধন করেন সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও সাহিত্যিক তপন বন্দোপাধ্যায়। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়, ক্রীড়া সাংবাদিক সব্যসাচী সরকার, দিল্লি বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তপন রায়, সেক্রেটারি প্রদীপ গাঙ্গুলি প্রমুখ।

বইমেলার প্রথমদিনে সন্ধ্যার পরে ‘ফিরে দেখা মুক্তিযুদ্ধ: বাংলাদেশের বিশিষ্টজন’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আরমা দত্ত এমপি, সাংবাদিক আবেদ খান, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৌমব্রত দাশ। বইমেলায় ‘সংগ্রাম, সিদ্ধি ও মুক্তি’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

দিল্লিতে আনন্দমুখর বাংলা বইমেলা

যতটা প্রাণ আশা করেছিলাম; ততটা ছিল না। কারণ ১৬ থেকে ১৯ মার্চ বইমেলায় পাঠক ও দর্শকদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। আর বিদেশ-ভূঁইয়ে এত বাঙালি পাবেন কোথায়? মেলায় বইয়ের স্টলের পাশাপাশি ৬টি হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের স্টল ছিল। সেখানে দেশীয় বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড়, গহনা ছিল। এছাড়াও নিয়মিত চা পানের জন্য চায়ের দোকান তো ছিলই।

আরও পড়ুন: বইমেলায় শিশুদের বিনোদন দিচ্ছে সিসিমপুর, বাড়ছে আগ্রহ

রোববার ভারতের ছুটির দিন হওয়ায় এদিন পাঠকের বেশ ভিড় ছিল। আর শনিবার বৃষ্টি নেমে অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটালেও সিডিউল পরিবর্তন করা হয়নি অথবা বৃষ্টির কারণে কেউ স্থান ত্যাগ করেননি। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি কেন্দ্রিক কিছু বাঙালি সাহিত্যচর্চা করেন। তারা হলেন ড. শ্বাশতী গাঙ্গুলি, বিপ্লব দাশগুপ্ত, কালীপদ চক্রবর্তী, অরূপ বন্দোপাধ্যায়, প্রাণজি বসাক প্রমুখ। তাদের উপস্থিতি ও কর্মকাণ্ড লক্ষ্যণীয় ছিল।

দিল্লিতে আনন্দমুখর বাংলা বইমেলা

দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন যাত্রা শুরু করে ১৯৫৮ সালে। দিল্লিতে অবস্থানরত বাংলা ভাষাভাষিদের সংস্কৃতি বিকাশ ও নিজেদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক তৈরির জন্য বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের যাত্রা শুরু হয়। দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন জাস্টিস এম আর সেন, প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডা. রমেশ চন্দ্র মজুমদার।

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য দিল্লি বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বইমেলার পাশাপাশি অনেক ধরনের অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো ছিল সৌমিত্র মঞ্চ। নানা পেশার মানুষের আগমন অনুষ্ঠানকে দিয়েছে প্রাণ। ঢাকা থেকে দিল্লি বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে গর্বিত হয়েছি। এটি ভারতের বাংলা ভাষার তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা। বাঙালির কলতানে বইমেলার দিনগুলোয় নয়া দিল্লির গোল মার্কেটের পেশোয়া রোড মুখর হয়ে উঠেছিল। বাঙালির মিলনমেলায় আমার মনও আনন্দে নেচে উঠেছিল।

লেখক: ব্যাংকার ও গল্পকার।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।