টিনের টুকরায় শৈশবের স্বপ্নের মিঠাই

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

হঠাৎ কানে ভেসে আসলো টুই টাং শব্দ। সেই সঙ্গে হাক ‘এই মিঠাই লাগবে, মিঠাই’। কাছে যেতেই দেখি এক হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা, যিনি ঘুন্টি দিয়ে আওয়াজ করছেন।

একসময় এই আওয়াজেই গ্রামের শিশুরা ছুটে আসত ঘর ছেড়ে। তাদের চোখে জ্বলজ্বলে আনন্দ। হয়তো হাতে টাকা নেই, কিন্তু মুখে বিনিময়ের প্রস্তাব-‘চাচা, একটা পুরান বোতল আছে। দিব, মিঠাই দাও না?’

বিজ্ঞাপন

আজো এই চিত্রের ব্যতিক্রম হলো না। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে দেখলাম একই চিত্র। তবে এখন এই চিত্র আর তেমন দেখা যায় না। গ্রামে দেখেই হয়তো দেখতে পেলাম।

ভার কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন যে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা, তার নাম হোসেন। বয়স ছুঁইছুঁই ষাট। পড়নে মলিন হয়ে যাওয়া ডোড়াকাটা গেঞ্জি। প্রতিদিন সকাল ৯টা নাগাদ বের হন, সন্ধ্যায় ফেরেন। হাতে নয়, কাঁধে ঝুলে থাকে দুই ঝুড়ি-একটিতে ভাঙা রেডিও, পুরোনো খেলনা, বোতল, টিন কৌটা-আরেকটিতে তুলার মতো গোলাপি রঙের মিষ্টির বাক্স। বাক্সটিও সুন্দর করে সাজানো স্বচ্ছ কাচ আর টিন দিয়ে তৈরি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

হাওয়াই মিঠাই একধরনের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি জাতীয় খাবার। একসময় শুধু গ্রামেই দেখা যেতো, এখন সর্বত্র পাওয়া যায়। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এর জনপ্রিয়তা আছে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এর কদর অন্য রকম।

বিক্রেতা জানালেন, ‘হাওয়াতে (বাতাস) এই মিঠাই এক মুহূর্তেই মিলিয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। বক্স থেকে বের করার সঙ্গে সঙ্গে মুখে দিয়ে খেতে হয় এটি’।

এ খাবারে পেট না ভরলেও মন ঠিকই ভরে। খেতে মিষ্টি। মুখের স্বাদও মেটায়। দেখতে বড়সড় মনে হলেও এটি মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গলে অল্প হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

হাওয়াই মিঠাই নিয়ে কথা বলতে বলতে গল্পের ঝাপি খুলে বসলেন হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘আমি টাকার জন্য ফেরি নিয়ে ঘুরি না। ঘুরি কারণ এই বাচ্চাগুলা খুশি হয়, হাসে। ভাঙা টিনের টুকরা দিয়া কয়- চাচা, এইটা নাও, আমায় একটা দাও। আমিও দেই। মনে হয় যেনো টিনের টুকরায় বিক্রি করি স্বপ্নের মিঠাই’।

এক পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিল একটি শিশু-নাম সানজ্বীদা, বয়স ৫ বছরের মতো। সে পুরোনো একটা সাবান দানি নিয়ে এসেছে। সেটা দিয়েই তাকে দুইটা হাওয়াই মিঠাই দিলেন বিক্রেতা।

হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার সঙ্গে আবারও কথা হয়। তিনি বলেন, ‘হাটে গিয়ে বেচার মতো অবস্থা নাই। এই গ্রামে আমি অনেক দিন যাবৎ আসি। আগে ভাঙাচোড়া দিয়ে বেশি মিঠাই কিনতো মানুষ, এখন টাকা দিয়েও কেনে। পাঁচ টাকায় ১০ টুকরো আর দশ টাকায় ২০ টুকরো দেই’।

বিজ্ঞাপন

হোসেন আরও জানান, সারাদিন ঘুরে তেমন একটা আয় হয়না। একদিনে টাকা দিয়ে মিঠাই বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকার। আর ভাঙাচোড়া। ভাঙাচোড়া বিক্রি করে আর কত টাকা পাই! সেটি দিয়েই চলে সংসার।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি দুদু প্রমাণিক জানালেন, আগে একসময় এই ধরনের ফেরিওয়ালা গ্রামে খুব আসতো। এখন আর তেমন আসে না। এখন গ্রামের মোড়ে মোড়ে দোকান। এক পা ফেললেই দোকান। আগে গ্রামের লোকেরা এধরনের ফেরিওয়ালাদের ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু এখন আর তা নেই।

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।