তুষারের শহর থেকে মহাকাশে লাইকা

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৫

নির্জন এক রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এক ক্ষুধার্ত কুকুর। নাম ছিল না, ঠিকানা ছিল না। মস্কোর তুষার ঢাকা অলিগলিতে যে কেউ তাকে দেখলে পাশ কাটিয়ে যেত। অথচ কেউ ভাবতেই পারেনি, সেই অসহায় কুকুরটি একদিন হয়ে উঠবে বিশ্বের নজরকাড়া এক নাম লাইকা। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে থাকবে তার নাম, কারণ সেই প্রথম প্রাণী, যে পা রাখে পৃথিবীর বাইরে, মহাকাশে।

১৯৫৭ সালের কথা। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলছে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতা ‘স্পেস রেস’। সোভিয়েতরা সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছিল স্পুটনিক-১ নামক কৃত্রিম উপগ্রহ। এরপর তারা চাইলো এক ধাপ এগোতে। একটি জীবন্ত প্রাণীকে পাঠাতে চাইল মহাকাশে, মানুষের আগে।

তুষারের শহর থেকে মহাকাশে লাইকা

লাইকার নতুন নাম হলো ‘মিশনের নায়িকা’। তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো মহাকাশযাত্রার জন্য। ছোট ছোট কেবিনে থাকতে শেখানো হলো, জোরে শব্দ শোনার অভ্যাস করানো হলো, এমনকি কৃত্রিম অভিকর্ষের ভেতরে কেমন আচরণ করতে হয়, তাও শিখানো হলো। লাইকা বেশ ভালোভাবেই এগুলো আয়ত্ত করতে থাকে। কিন্তু সে জানত না যে, পৃথিবীতে তার আর ফেরা হবে না।

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর। স্পুটনিক-২ উৎক্ষেপণের দিন। পৃথিবীর শত কোটি চোখ আকাশে তাকিয়ে, আর সেই মহাকাশযানে নিঃশব্দে বসে আছে লাইকা। সোভিয়েতরা পৃথিবীকে জানাল, আমরা একটি প্রাণীকে মহাকাশে পাঠিয়েছি। লাইকা এখন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে।

কিন্তু পৃথিবী জানে না, লাইকার জন্য এই যাত্রা একমুখী। যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতা, উচ্চ তাপমাত্রা সব মিলিয়ে উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরই লাইকার জীবনাবসান ঘটে। সে আর ফিরে আসেনি। তবে তার এই আত্মত্যাগ খুলে দিয়েছিল ভবিষ্যৎ মহাকাশযাত্রার পথ।

অনেকে বলে, লাইকা ছিল এক ‘মহাকাশ শহীদ’। কেউ কেউ আবার বলেন, তার মৃত্যু ছিল অমানবিক। বিতর্ক থাকলেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই লাইকা বিজ্ঞান ও মানবজাতির অগ্রযাত্রার পথে এক নিঃশব্দ সাহসিনী, এক অনামী নায়িকা।

তুষারের শহর থেকে মহাকাশে লাইকা

বহু বছর পর, ২০০৮ সালে, রাশিয়া লাইকার স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করে। সেখানে লেখা ছিল ‘তুমি ফিরে আসনি, কিন্তু আমরা তোমায় ভুলিনি।’

পৃথিবী হয়তো লাইকার কান্না শোনেনি, তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকেনি। তবুও সে পৃথিবীবাসীকে শিখিয়েছে সাহস কাকে বলে! অবলা প্রাণী হয়েও কীভাবে ইতিহাসে অমর হতে হয়!

তথ্যসুত্র: নাসা হিস্টোরি, বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, আর-এস-সি এনারজিয়া আর্কাইভস, মনুমেন্ট টু লাইকা

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।