আন্তর্জাতিক অগ্নিনির্বাপক দিবস

ফায়ারফাইটার: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের রক্ষা করেন

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৫ পিএম, ০৪ মে ২০২৫

সানজানা রহমান যুথী
আমাদের চারপাশের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পেশার মানুষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কেবল প্রয়োজন হলেই আমরা তাদের স্মরণ করি। তারাও আমাদের মত মানুষ কিন্তু দ্বায়িত্বের ভারে তাদের জীবনের ঝুঁকি ও অনেক। এমনই একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হলো অগ্নিনির্বাপক। দমকলকর্মীরা প্রতিদিন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।

মূলত দমকলকর্মীদের প্রধান দায়িত্ব হলো জীবনের নিরাপত্তা ও সম্পদ রক্ষার জন্য অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাপনের কাজ করা, পাশাপাশি বিপজ্জনক পরিস্থিতি বা বন্দিদশা থেকে মানুষকে উদ্ধার করা। তাই আন্তর্জাতিকভাবে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের সেবার জন্য তাদের সম্মান জানাতে, সেবার সময় প্রাণ হারানো অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের স্মরণ করতে প্রতিবছর ৪ মে আন্তর্জাতিক অগ্নিনির্বাপক দিবস পালিত হয়।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক অগ্নিনির্বাপক দিবসের মাধ্যমে অগ্নি প্রতিরোধ এবং আরও নিবিড় ও ব্যাপক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা প্রচার করা হয়। এই দিনটি দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক অগ্নিনির্বাপক দিবস পালনের ইতিহাস জানেন কি? ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর, অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার লিন্টনে একটি দাবানল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে গিয়ে জিলং ওয়েস্ট ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা একটি বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসের কারণে আগুনের দিক পরিবর্তিত হয় এবং পানির ট্যাংক পুনরায় ভরার সময় পুড়ে যায়। এতে পাঁচজন সাহসী ফায়ারফাইটার প্রাণ হারান-গ্যারি ভ্রেডেভেল্ড, ক্রিস্টোফার ইভান্স, স্টুয়ার্ট ডেভিডসন, জেসন থমাস এবং ম্যাথিউ আর্মস্ট্রং। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পরই আন্তর্জাতিক ফায়ারফাইটার দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আন্তর্জাতিক অগ্নিনির্বাপক দিবস হিসেবে লাল ও নীল রংয়ের ফিতা ব্যবহার করা হয়। এই ফিতাটি ৫ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি) লম্বা এবং ১ সেন্টিমিটার (০.৩৯ ইঞ্চি) চওড়া হয়। এতে দুটি আলাদা রং থাকে যার দ্বারা দমকলকর্মীরা যেসব উপাদানের সঙ্গে কাজ করেন তা নির্দেশ করে-ফিতার শীর্ষে এই দুটি রং একসঙ্গে যুক্ত থাকে। ফিতার লাল অংশটি দ্বারা আগুনকে এবং নীল অংশটি দ্বারা পানিকে বোঝানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

‘সাউন্ড অব’ রীতিটি আন্তর্জাতিক ফায়ারফাইটার দিবসের অংশ হিসেবে প্রতি বছর মে মাসের প্রথম রবিবার স্থানীয় সময় দুপুরে পালিত হয়। এই রীতিতে ৩০ সেকেন্ডের জন্য ফায়ার সাইরেন বাজানো হয় এবং তারপর এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়-সেসব দমকলকর্মীদের স্মরণে, যারা কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। ২০০২ সালে এই রীতির সূচনা হয় এবং তা প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পালন করা হয়ে আসছে।

একজন দমকলকর্মী প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে তেমন তাদের দেখা মেলে না। পরিবারকে ও সময় দেওয়া হয় না, কর্মজীবনে দ্বায়িত্ব পালনের জন্য। যেখানে অন্য পেশার মানুষ পরিবারের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর সময় পায়। দেশের পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কর্মস্থলে থাকতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে একজন দমকলকর্মী অন্যকে সহযোগিতা করতে সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আবহাওয়া যেমনি হোক না কেন কোথাও কোনো অগ্নিকাণ্ড হলে তিনি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে দ্রুত ছুটে আসেন।

একজন দমকলকর্মী আমাদের সহযোগিতা করার এক অদৃশ্য নায়ক। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হলেও অগ্নিনির্বাপক পেশা একটি মহৎ পেশা। তাদের মত এমন হাজারো পেশার মানুষ আছে বলেই আমরা নিরাপদে বসবাস করতে পারছি। আজ এই বিশেষ দিনে তাদের জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।