বন্ধু দিবস শুরু হয়েছিল ব্যবসায়িক ধারণা থেকে

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৬ এএম, ০৩ আগস্ট ২০২৫

বন্ধু, বন্ধু দিবস। অর্থাৎ বন্ধুদের জন্য বছরের একটি দিন বরাদ্দ। আসলে বন্ধুত্বের কি কোনো দিনক্ষণ আছে? বন্ধুত্ব কি কখনো পুরোনো হয়? বন্ধুত্ব কি কখনো দিনক্ষণ ঠিক করে উদযাপন করার ব্যাপার? অনেকেই এই দিনের বিরোধিতা করেন। অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটা করে বন্ধুদের নিয়ে পোস্ট করে দিনটি উদযাপন করেন।

জানেন কি, আজকের এই বন্ধু দিবসের ইতিহাস কী? কীভাবে এলো এই বন্ধু দিবস? এটি ছিল মূলত একটি ব্যবসায়িক কৌশল। ১৯৩০ সালের ২ আগস্ট বিশ্বখ্যাত উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হল বন্ধু দিবসের আয়োজন করেন। যেন সবাই একসঙ্গে মিলে বন্ধুত্বের উৎসব পালন করতে পারেন।

বন্ধু দিবস শুরু হয়েছিল ব্যবসায়িক ধারণা থেকে

এদিন কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধু দিবস পালন করার চল শুরু হয়। তবে পরে সবাই তখন বুঝতে পারেন যে, এটি আসলে জয়েসের গ্রিটিংস কার্ড বিক্রির একটি কৌশল। অবশ্য তার সে প্রচেষ্টা অতটা সফল হয়নি। তবে এখান থেকেই এই বন্ধু দিবসের ধারণা এসেছে বলেও মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ।

এরপর ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্ব দিবস পালনের চিন্তা ডা. র্যামন আর্টেমিও ব্রাকোর মাথায় আসে। প্যারাগুয়ে শহরের পুয়ের্তো পিনাস্কোয়ে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজে বসেছিলেন তিনি। তখনই বন্ধুদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন মেরি গ্রুপ ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড।

বন্ধু দিবস শুরু হয়েছিল ব্যবসায়িক ধারণা থেকে

এই সংস্থাটি জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ নির্বিশেষে নিঃস্বার্থ ও মানবদরদী বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করে। এরপর ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রসংঘ তৎকালীন সাধারণ সচিব কফি আনানের স্ত্রীর নাম ন্যান লেগারগ্রেন উইনি দ্য পু কার্টুন চরিত্রকে বন্ধুত্বের দূত হিসেবে চিহ্নিত করেন।

১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই প্রথম ফ্রেন্ডশিপ ডে উদযাপিত হওয়ার পর ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলি অব দ্য ইউনাইটেড নেশন’ ২০১১ সালের ৩০ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। মূলত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদি নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের মানুষের বন্ধুত্বের একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস ঘোষণা করে।

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এরপর ছড়িয়ে যায় দিবসটি। বন্ধু দিবসে বন্ধুদের ফুল, কার্ড, রিস্ট ব্যান্ড ইত্যাদি উপহার দিয়ে বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করা হয়। একেক দেশে একেক তারিখে বন্ধু দিবস পালিত হয়। যেদিনই হোক বন্ধু দিবস, আপনার জন্য এটি হতে পারে একটি বিশেষ দিন। অনেকদিন যে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না, আজ দেখা করুন, পছন্দের জায়গায় আড্ডা দিন, খেতে পারেন একসঙ্গে হলে যে খাবারগুলো খেতেন প্রতিদিন।

বন্ধু দিবস শুরু হয়েছিল ব্যবসায়িক ধারণা থেকে

দিন যায়, মাস-বছর, যুগ যুগ কেটে গেলেও বন্ধুত্ব পুরোনো হয় না কখনোই। বন্ধুর সম্পর্ক আত্মার সঙ্গে, এলবার্ট হুবার্ট লিখেছিলেন, বন্ধু হয় সেই ব্যক্তিরাই যারা আপনার সম্পর্কে সব জানে, সত্য-মিথ্যার বাইরে আপনাকে পছন্দ করে। বিখ্যাত আমেরিকান সাহিত্যিক রালফ ওয়াল্ডো এমারসন বলেছিলেন,‘প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’ । নিশ্চয়ই তাই। বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় আত্মার মিল থেকে। সেখানে আর কোনো কিছুর মিল-অমিলের দরকার হয় না।

শিল্পী তপুর গাওয়া গানটা মনে পড়ে নিশ্চয়ই, ‘পুরো পৃথিবী এক দিকে, আর আমি অন্য দিক/সবাই বলে করছ ভুল, আর তোরা বলিস ঠিক/তোরা ছিলি, তোরা আছিস/জানি তোরাই থাকবি/বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কী লাগে?’ । প্রিয় সেই বন্ধুগুলোকে আজ মনে করুন। নতুন স্মৃতির ফ্রেম তৈরি করতে পারেন ব্যস্তদিনে একটু সময় বের করে।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।