৩৮ হাজার মানুষের কাটা নাকের সমাধি

জাপানের কিয়োটো শহরের নিরিবিলি আবাসিক এলাকার মাঝে আছে একটি সমাধি। ঘাসে আচ্ছাদিত ৩০ ফুট উঁচু টিলা সদৃশ এ সমাধি তৈরি করা হয় ১৬ শতকের শেষের দিকে। এর নাম ‘মুমুজিকা টিলা’।
কোরিয়া-জাপানের যুদ্ধের সময় কোরিয়ান প্রায় ৩৮ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর নাক কেটে নেয় জাপানিরা। এরপর ওই নাকগুলো পাঠানো হয় জাপানে। এরপর একসঙ্গে ৩৮ হাজার কাটা নাকের সমাধি দেওয়া হয় জাপানের কিয়োটো শহরে।
টয়োটোমি হিদায়িশির নেতৃত্বে জাপান ১৫৯২ সালে কোরিয়ান উপদ্বীপ এবং চীন দখলের উদ্দেশ্যে কোরিয়া আক্রমণ করেছিল। যা তখন মিং রাজবংশের অধীনে ছিল। জাপানি বাহিনী কোরিয়ান উপদ্বীপ দখল করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়েছিল। তবে তারা চীন দখল করতে ব্যর্থ হয়।
এর কয়েক বছর পর ১৫৯৭ সালে মিং এবং কোরিয়ার জোসোনের সম্মিলিত বাহিনীর একটি শক্ত প্রতিরক্ষা দল জাপানকে দক্ষিণ উপদ্বীপে যেতে বাধ্য করে। সেখানেই দুই বিরোধী সেনাবাহিনীর মধ্যে টানা ১০ মাস যুদ্ধ হয়। ১৫৯৮ সালে টয়োটোমি হিদায়িশির আকস্মিক মৃত্যুর পর এ শত্রুতার অবসান ঘটে।
তবে ১০ মাস যুদ্ধ চলাকালীন জাপানিরা অনেক কোরিয়ান ও চীনা নাগরিকের মাথা কেটে লবণ মাখিয়ে প্যাকেট করে জাপানে পাঠাতে থাকে। সেখানে জাপানি সামরিক বাহিনী গণনা করত, তারা ঠিক কতজনকে হত্যা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাপানি সৈনিকদের পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।
তবে একপর্যায়ে কাটা মাথা জাপানে পাঠাতে গিয়ে তারা হিমশিম খেতে থাকে। এ কারণে কাটা মাথার বদলে জাপানি সৈনিকরা কোরিয়ানদের কাটা নাক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেনাবাহিনীর উপর টয়োটোমি হিদায়িশির আদেশ ছিল, ‘যুদ্ধের ময়দানে যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, ধর্মযাজক কিংবা মর্যাদাবান যে কেউ হোক না কেন, বৈষম্য ছাড়াই সবাইকে হত্যা করতে হবে।’
স্টিফেন আর টার্নবুল তার ‘সামুরাই আক্রমণ’ বইয়ে জানিয়েছেন, টয়োটোমি হিদায়িশির সেনাবাহিনী ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৮ কোরিয়ান ও ২৯ হাজার ১৪ জন চীনা সেনার কাটা মুণ্ডু সংগ্রহ করেছিল। তবে ইতিহাস বলছে, এ সংখ্যা অনেক বেশি।
হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা অসম্ভব। কারণ অনেক মাথা ফেলে দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে যাদের নাক কাটা হয়েছিল; তাদের মধ্যে অনেকেই প্রাণে বেঁচে ছিলেন। জানা যায়, তখনকার সময় অনেক কোরিয়ান নাক ছাড়াই বহু বছর বেঁচে ছিলেন।
জাপানে প্রেরিত নাকগুলো কয়োটো এবং ওকায়ামায় সমাহিত করা হয়েছিল। কয়োটোতে হিদায়িশি হোকোজি মন্দিরের পাশে কাটা নাকের একটি সমাধি তৈরি করার নির্দেশ দেন। তবে হিদায়িশি কেন বৌদ্ধ মন্দিরে কাটা নাকগুলোর সমাধি দিয়েছিল, তা কারও জানা নেই। আজও কাটা নাকের সমাধি কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
অ্যামিউসিং প্লান্ট/জেএমএস/এসইউ/এমএস