রহস্যময় দ্বীপে শুধুই সাপের বসবাস

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:৪৩ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের দ্বীপ। এমন একটা দ্বীপের কথা কী কল্পনা করা সম্ভব? যেখানে মানুষের কোনো অস্তিত্বই নেই, নেই কোনো বাসস্থান! তবে ‘ইলহাদা কুইমাদা গ্রান্ডে’ নামক দ্বীপে রয়েছে রহস্যের পাশাপাশি সাপের আনাগোনা।

দ্বীপটির নাম যেমন অদ্ভুত, তেমনই সুন্দর। তবে দ্বীপটিকে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করে ভয়। অধিক পরিমাণে সাপের বসবাস থাকায় এই দ্বীপ থেকে মানুষ দূরেই থাকেন। ঘরবাড়ি বা চাষাবাদ করার আগ্রহ নেই কারও মাঝে। এই দ্বীপে গেলে সাপেদের সম্মুখীন হতেই হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখানে প্রতি বর্গমিটারে কমপক্ষে ৫টি সাপ থাকে। সাপের কারণে এই দ্বীপে পাখিদের আনাগোনাও কম। তবে অভিবাসনের সময় পাখিরা এখানে বিশ্রাম নেয়, আর তখনই শিকারে নেমে পড়ে সাপেরা।

ব্রাজিলের শহর সাও পাওলো থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপের অবস্থান। আনুমানিক ১১ হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানে ব্রাজিলের মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক হয়ে এটি দ্বীপে পরিণত হয়। এই দ্বীপে বিষধর সাপের মধ্যে পিট ভাইপার অন্যতম এবং এই দ্বীপটিই এই সাপের প্রধান আবাসস্থল। পৃথিবীর অন্যান্য বিষধর সাপের শত শত প্রজাতিও এখানে আছে। এমনকি বোথ্রপস ইনসুলারিসের মতো সাপও আছে এখানে।

রহস্যময় দ্বীপে শুধুই সাপের বসবাস

এখানকার লাইটহাউস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বহু বছর আগে একটি পরিবার বসবাস করতেন। তবে শোনা যায়, সাপের দল ঘরে ঢুকে পুরো পরিবারকে মেরে ফেলে! এরপর থেকে বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেই লাইটহাউসের কাজ করতে অভিজ্ঞ একটি টিম সেখানে যায়। কাজ শেষে আবার ফিরে আসে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের যে স্থানের মানুষ এখনো পোশাক পরেন না

দ্বীপটিতে সাপের সংখ্যা নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। ধারণা করা যায়, ৪ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই দ্বীপটিতে কমপক্ষে ৪ লাখ ৩০ হাজার সাপ রয়েছে। হিসেবে প্রতি বর্গমিটারে একটি করে। তাই দ্বীপটিকে ‘আইল্যান্ড অব স্নেক’ বলেও ডাকে অনেকে। এই নামেই এটি বেশি পরিচিত।

এসব সাপ আকাশে উড়ন্ত পাখিকেও ছো মেরে পেঁচিয়ে নিজের খাবারে পরিণত করে ৷ এছাড়াও টিকটিকি এবং অন্যান্য সাপও থাকে এদের খাদ্যে তালিকায়। এখানে আবাস বিরল প্রজাতির সাপ গোল্ডেন ল্যান্সহেড। মাত্র ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এরা। মূল খাবার হচ্ছে পাখি। এদের বিষ এতটাই মারাত্মক যে এই সাপের বিষে মানুষের মাংস মুহূর্তের মধ্যে গলে যায়।

রহস্যময় দ্বীপে শুধুই সাপের বসবাস

সাপগুলোর বিষ কালোবাজারে প্রতি একশ গ্রামের দাম সাড়ে ১৭ হাজার পাউন্ডেরও বেশি। তাই এই সাপকে বাঁচাতে ব্রাজিল সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্ববাজারে এই সাপের চাহিদা থাকায় চোরাকারবারিদের হাতে থেকে রক্ষা করতে এবং সাপের কামড়ে যাতে মৃত্যু না হয় সেজন্য সাধারণ মানুষকে এই দ্বীপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রাজিল সরকার।

এই দ্বীপে কাকে যেতে দেওয়া হবে আর কাকে নয় তা ঠিক করে ব্রাজিলের নৌসেনা। কারণ শুধু মানুষের নিরাপত্তা নয়, সাপেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাটাও তাদের লক্ষ্য। তাই কয়েকজন বিজ্ঞানী ও নৌসেনা আধিকারিক ওই দ্বীপে যেতে পারেন। দ্বীপটি জীববিজ্ঞানী এবং গবেষকদের জন্য একটি জীবন্ত পরীক্ষাগার। বিরল এই সাপদের সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে গবেষকদেরও বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।