আইয়ুব বাচ্চু থেকে জেমস, সবার গিটারের ভরসা আব্দুল রফিক

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

জিহাদুল ইসলাম

লাকি আকন্দ, আইয়ুব বাচ্চু, জেমসসহ দেশের নামকরা অনেক সংগীত শিল্পীদের গিটারের সমস্যা সমাধান করতেন ষাটোর্ধ আব্দুল রফিক। প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে নামিদামি যে কোনো ব্র্যান্ডের গিটারের জটিলতার শেষ ভরসা রফিকের ছোট্ট এই দোকান।

একস্টিক গিটার, লিড গিটার, বেস গিটার, লেস পল গিটারের সব ধরনের মেরামতের কাজ করতে পারেন। গিটার মেরামতে আব্দুল রফিকের বিকল্প যেন তিনি নিজেই। তিনি বলেন, ‘সত্তর-আশির দশকে আমার বিকল্প কেউ ছিল না। আমি অহংকার করে বলতে পারি। আর শিল্পীরাও স্বীকার করেন’।

গলির ভেতরে ছোট্ট দোকানে ১৯৭৭ সাল থেকে গিটার মেরামতকারী রফিককে প্রথমদিকে চিনতেন না অনেক সংগীত শিল্পীরা। রাজধানীতে গুটিকয়েক বাদ্যযন্ত্রের দোকান থাকলেও গিটার মেরামতের জন্য পাঠিয়ে দিতেন মেকানিক আব্দুল রফিকের দোকানে। রাজধানীজুড়ে ছিল মাত্র তিনটি বাদ্যযন্ত্রের দোকান-সুরস্রি, সুন্নিকেতন ও মেলোডি।

আরও পড়ুন
শীতলপাটিতে সুদিন ফিরছে তাদের

তবে কিছুদিন পরেই তখনকার সংগীত শিল্পীরা জানতে পারেন তাদের গিটারগুলো বিদেশে নয় বরং দেশেই মেরামত করেন আব্দুল রফিক। এরপরেই আইয়ুব বাচ্চু, আতিফ নিলয়সহ অনেকেই দেখা করতে আসেন গলির এই দোকানে।

গিটার মেরামতের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গুণী শিল্পীদের থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন রফিক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে পেয়েছেন কাজের প্রস্তাবনা। তবে স্বাধীনচেতা মানুষ তাই সবিনয়ে চাকরি প্রত্যাখান করেছিলেন আব্দুল রফিক।

গুণী সংগীতশিল্পী কিংবা নতুন শিল্পী যেই হোক না কেনো রফিকের দোকানে গিটার মেরামত করাতে হলে মানতে হবে বিশেষ কিছু শর্ত। ঝামেলা এড়াতে ও সতর্কতার জন্য নানা লেখা প্রিন্ট করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের দেয়ালে। আব্দুল রফিক মনে করেন, মানুষ এখনো টেকনিশিয়ানদের বিশ্বাস করে না। তবে কাজ শেষ না হলে যেহেতু কাস্টমার টাকা দেন না তাই এটি শতভাগ হালাল পেশা।

সাড়াজাগানো অনেক গুণী শিল্পীদের যেন পরিবারের সদস্য ছিলেন ষাটোর্ধ আব্দুল রফিক। উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শিল্পীদের সঙ্গে কাটানো নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি, মাসুদ ভাই আর বাচ্চু ভাই একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছি অনেকবার। একবার গিটারের সমস্যা সমাধান করার জন্য বাচ্চু ভাইয়ের স্টুডিওতে গেলাম। বারবার গিটারের কেবল পরিবর্তন করায় তিনি রাগ হয়ে নিজে অনেকগুলো ক্যাবল আমার সামনে রাখলেন। যখন তার প্রিয় গিটারটি মেরামত হলো তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। আরেকবার সংগীতশিল্পী লাবু ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে কল দিয়ে বাসায় ডেকে নিলেন। গিয়ে দেখি পুরো রুমে লাবু ভাই গিটার খুলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে’।

আরও পড়ুন
‘পচা কলার’ দোকানে মাসে বিক্রি লাখ টাকা

১৯৭৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের রেডিও ইলেক্ট্রনিক্স ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ওয়ার্কশপে মেকানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আব্দুল রফিক। তবে বাদ্যযন্ত্রের দোকানিদের অনুরোধে অল্প পরিমাণে কাজ করতে করতে পরবর্তীতে দক্ষ হয়ে ওঠেন গিটার মেরামতে। আশির দশকে ইলেক্ট্রনিক্স নানা ব্র্যান্ডের গিটার বাজারে আসলে নিজ উদ্যোগে শিখে নেন মেরামতের কাজ।

রাজধানীসহ সারাদেশে বর্তমানে অনেক মিউজিসিয়ান অল্প পরিসরে গিটার মেরামত করেন। বেশিরভাগ ওয়ার্কশপে বাদ্যযন্ত্রের পার্স পরিবর্তন করে দেওয়া হয় তবে আব্দুল রফিক নিজেই আবিস্কার করেন বিকল্প পদ্ধতি। এমনকি বিভিন্ন ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ দোকানেই তৈরি করেন তিনি।

গলির ভেতরের সিঁড়ির নিচের ছোট্ট দোকানে প্রায় ৫০ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন আব্দুল রফিক। স্বচ্ছতা হারানোর ভয়ে অধিক মুনাফা হাতিয়ে কখনো বড় পরিসরে ব্যবসার স্বপ্ন দেখেননি। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আমি একাই দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সবাই এখন আমার দোকানে এসে প্রশ্ন করে। তবে আমিতো টাকার বস্তা কোথাও খুঁজে পাইনি। অনেকেই আমার অনেক পরে এই পেশায় এসে এখন অনেক টাকার মালিক’।

আরও পড়ুন
মরুভূমির উটের খামার রাজধানীতে
অর্থের বিনিময়ে পছন্দমতো বউ পাওয়া যায় যে দেশে

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।