স্মৃতিতে বৈশাখী মেলা

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১১:৩৯ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

বছর ঘুরে আবারও এলো পহেলা বৈশাখ। বৈশাখ মানেই নতুন বছর। বৈশাখ মানেই মেলা, উৎসব-পার্বণে শামিল হওয়া। বৈশাখ মানেই পুরোনোকে বিদায় জানানো। তবে পুরোনোর বিদায় হলেও বৈশাখের কিছু স্মৃতি প্রাণবন্ত। মনে হয় এ যেন স্মৃতি নয়, প্রতিদিনের অভ্যাস।

এক যুগ আগের কথা। বৈশাখের ছুটিতে গ্রামে মামার বাড়ি গিয়েছি। ভাঙা রাস্তা, ঘরে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার, নিকটবর্তী দুটি বাজার। কেনাকাটার জন্য এই দুটি বাজারই বিখ্যাত। আর দূরের হাট সাপ্তাহিক হাট। তবে এই বাজার, হাটগুলোয় দৈনন্দিন বাজার, সাংসারিক জিনিসপত্র পাওয়া যায়। শৌখিন পণ্য তো মেলা ছাড়া পাওয়া যায় না। তাই বৈশাখী মেলার জন্য গ্রামের মানুষ বছর জুড়ে অপেক্ষা করতেন।

গ্রামে মেলা তো অনেক উৎসব ঘিরেই হয়। তবে আমার কাছে প্রিয় ছিল বৈশাখী মেলা। ভ্যাঁপসা রোদের প্রকপ কমে এলে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো মেলা। গ্রামে এলে মা একা ছাড়তে চাইতেন না। কোথাও গেলে মামাতো ভাইকে সঙ্গে দিয়ে দিতেন।

স্কুলের মাঠ, কিংবা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় হতো মেলার আয়োজন। প্রতিবছর একই স্থানে মেলা বসবে, এমনটি নয়। মেলার স্থান বদল হতো। মাইকিং করে ঘোষণা দিলেই হতো, ‘ভাইসব, এই বছর ১৪ বৈশাখ থেকে এক মাস মেলা চলবে পশ্চিমের বটতলায়’। সবাই এই ঘোষণা শুনেই চলে যেতেন মেলায়।

বৈশাখের দিন সকাল থেকেই মেলা শুরু। আমরাও বৈশাখের সাঁজে চার ভাই চললাম মেলায়। বটতলায় সাজানো সারি সারি দোকান। সেখানে সাজানো হাতপাখা, বেত-বাঁশ-মাটির তৈরি জিনিসপত্র, থালা-বাসন ইত্যাদি। এইসব গৃহস্থালি জিনিস কেনার জন্য নারীরা ভিড় জমাচ্ছেন দোকানে।

স্মৃতিতে বৈশাখী মেলা

কিন্তু আমার নজর মাটির তৈরি খেলনা, পুতুল, নাগরদোলায় চড়া, সার্কাস দেখা, মিষ্টি খাওয়া, বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানো। শত দোকানের ভিড়ে নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুল নাচ, খেলনার দোকানগুলোই আমাকে টানছে বেশি।

আরও পড়ুন

পা রাখার জায়গা নেই। ঠেলাঠেলির মাঝেই মেলার স্পিকারে বাজছে ‘মেলায় যাই রে’ গানটি। ভিড় ঠেলে সব দোকান ঘুরলাম। খেলনা জাতীয় কিছু জিনিস বড় ভাই কিনে দিলেন। মাটির তৈরি একটি পুতুল বউ কিনলাম। সঙ্গে বেতের তৈরি ছোট্ট ঘর। ত্রিশ টাকা খরচ হলো। তবে সেই সময় এই টাকা আমার কাছে অনেক বেশি। ছোট পিস্তল আমার অনেক পছন্দ। ঈদে সবসময় কিনতাম। মেলায় কান্নাকাটি করে অনেক কষ্টে কিনেছি। পিস্তল হাতে মনে অন্যরকম আনন্দ আসে।

ঘুরতে ঘুরতে বিকাল ঘনিয়ে এলো। নাগরদোলা চড়া শেষ। এখন সার্কাস, পুতুল নাচ না দেখলে মেলার আসল তৃপ্তি আসবে না। সার্কাস আর পুতুল নাচ দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো টের পেলাম না। এবার হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে বাড়ি ফেরার পালা। চারজনে দুটি হাওয়াই মিঠাই নিয়েছি।

হঠাৎ আকাশে গর্জন। বৈশাখের প্রথম দিনেই ঝড়ের আভাস। বাতাস বইছে, ধুলোবালি উড়ছে চারদিকে। দ্রুত বাড়ির পথে যাত্রা করলাম। রিক্সায় উঠতেই আরও জোরে বাতাস বইতে শুরু করল, ধুলোবালি চোখে-মুখে লেগে একাকার।

বিশ মিনিটের পথ। বৃষ্টি শুরুর আগে যেতেই হবে। ভাঙা রাস্তায় যেতে যতটা না কষ্ট হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি ভিজে যাওয়ার। বৈশাখের জ্বরে ভুগতে চাই না। বাড়িতে মা নিশ্চয়ই আমায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

ঝড়ের সঙ্গে রিক্সায় চেপে সেদিন আমিই জিতেছিলাম। ঘরে ঢোকার পরই বৃষ্টি শুরু। মায়ের বকা খাওয়া থেকে তাহলে এই যাত্রায় রক্ষা হলো। ধীরে ধীরে মেলায় কেনা জিনিসগুলো মা'কে দেখালাম।

ছোট্ট পুতুল বউটা মামাতো বোনকে দিলাম। খেলনা পিস্তল কিছুদিনের ভেতরেই নষ্ট হয়ে যায়। বেতের তৈরি ঘরটি অনেকদিন আমার কাছে ছিল। এখন আর নেই। তবে শৈশবের বৈশাখী মেলার মধুর স্মৃতি আজও সঙ্গে আছে।

আরও পড়ুন

আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বাক্সবন্দি বায়োস্কোপ
শৈশবের ঈদ: যদি ফিরে পেতাম আরেকটিবার!

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।