ঢাকার নতুন সংস্কৃতি হোলি


প্রকাশিত: ০৭:০৮ এএম, ০৬ মার্চ ২০১৫

বৃহম্পতিবার রাজধানীতে জমেছিল হোলি খেলা। ‘হোলি’ বা ‘দোলযাত্রা’ উৎসব উপলক্ষে এদিন ঢাকার বাসিন্দারা একে অন্যকে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে মাতোয়ারা হন। আবিরে রাঙা তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি অভিভাবকের সঙ্গে ছোট শিশুরাও এ থেকে বাদ যায়নি। দিনটিতে সনাতনধর্মের নারীরা মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পূজা করেন।

শাঁখারীবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই সব বয়সী নারী-পুরুষ হোলি খেলায় মেতে উঠেছেন। তারা নিজেদের গায়ে রং লাগিয়ে এ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। তরুণ-তরুণী ও ছোট ছেলে-মেয়েদের বাটিতে রং নিয়ে এ মাথা থেকে ও মাথায় ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তারা ‘শুভ হোলি’ বলে একে অন্যের গালে আবির মাখিয়ে দেন।



এই হোলি খেলা শুধু এখন ভারতেই সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের দেশেও। বাংলাদেশেও জনপ্রিয় উঠছে এ উৎসবটি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ উৎসবটি পালন করছে। জনপ্রিয় মডেল রিয়া ও আরশিনা পিয়া এ বছর উৎসব করে বন্ধুদের সঙ্গে হোলি খেলায় মেতে ওঠেন।  

এ উপলক্ষে দোকানে দোকানে বিশেষ মিষ্টান্ন ও পূজার জন্য বিশেষ ফুলের মালা বিক্রি হতে দেখা যায়। শাঁখারীবাজারের দোকানিরা বর্নিল সব রঙের গুঁড়া ও পিচকারি (তরল রং ছিটানোর পাইপ) ইত্যাদি বিক্রিতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন।

বহুকাল থেকেই দেখা গেছে ভারতে এই উৎসব পালন হতো। তারপর পুরান ঢাকার শুধু স্থানীয় সনাতনধর্মের বিশ্বাসীরাই এই উৎসব পালন করতেন। তবে সময়ের পালাবদলে বাংলাদেশে জনপ্রিয় উঠছে এ উৎসবটি। জাত-ধর্মের দেয়াল টপকে সার্বজনীন হতে শুরু করেছে দোল উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল এ উৎসবে যোগ দিতে নতুন ঢাকা থেকেও অনেককে পুরান ঢাকার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার ইত্যাদি এলাকায় উপস্থিত হতে দেখা গেছে।


দোলযাত্রা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য করার মতো বিষয় হলো এই আনন্দ উপলক্ষটি আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গতকাল দেখা যায় বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা রঙ মেখে দিনটি মাতিয়ে রেখেছিলেন।

তাদের মধ্যে উল্লেখ্য, জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। হোলির আয়োজেন কলকাতায় তার সহশিল্পীদের সঙ্গে রঙ খেলছেন তিনি। সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনি’ ছবির শুটিংয়ে বর্তমানে কলকাতায় আছেন এই অভিনেত্রী।

এছাড়াও জনপ্রিয় মডেল রিয়া ও আরশিনা পিয়া এ বছর উৎসব করে বন্ধুদের সঙ্গে হোলি খেলায় মেতে ওঠেন।  ভিট মডেল হাসিন রওশন ও টিভি অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাকেও রঙ নিয়ে হোলিতে মেতে ওঠতে দেখা যায়।


পণ্ডিতদের ভাষ্য অনুযায়ী, দোলযাত্রার সঙ্গে হোলি উৎসবের সম্পর্ক রয়েছে। এ উৎসবের আরেক নাম ‘বসন্তোৎসব’। ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা ও অন্য গোপীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সে ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। আর দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন গানের সঙ্গে শোভাযাত্রা বের করা হয়।


এরপরই ভক্তরা আবির নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে ‘দোলপূর্ণিমা’ বলা হয়। দোল উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও আছে। এদিন সকাল থেকেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আবির ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হন। সাধারণত ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বা মার্চের শুরুতে দোলের তারিখ পড়ে।



এ বছর দোলের দিন পড়ে ৫ মার্চ। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের সনাতনধর্মীয় সম্প্রদায়ের দোল উৎসব সব সাম্প্রদায়িকতা ছাপিয়ে ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। উত্তর ভারতে অবশ্য দোল ‘হোলি’ নামে পরিচিত।

পৌরাণিক কাহিনীতে আছে, গায়ের রং ঢাকতেই বসন্তের এক প্রেমময় মুহুর্তে আবীর দিয়ে রঙ খেলা শুরু করেন শ্রীকৃষ্ণ। রাধার অমন জ্যোৎস্নার মতন গায়ের রঙ দেখে কালাচাঁদের হিংসা হতেই পারে। তবে কালের বিবর্তনে রাধা ও গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণলীলায় থেমে থাকেনি এই হোলি খেলা কিংবা দোলউৎসব। বর্তমানে হোলি খেলা হয়ে উঠেছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মনের রঙে সকলকে রাঙিয়ে দেওয়ার বাসন্তী উৎসব।



বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সাথে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন।

দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্যদেবের জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। দোলযাত্রা উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও রয়েছে। এই দিন সকাল থেকেই নারীপুরুষ নির্বিশেষে আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হয়।

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।