মা, তোমার জন্য…


প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ০৯ মে ২০১৫

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, তারাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছি। পূর্ণিমার গোল চাঁদটাকে আদর করছি। আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছা হতো ছোটবেলা থেকেই। মা বলতেন, ‘অনেক বড় হলে আকাশ ছোঁয়া যায়।’ ভাবতাম, সিলেটে শহরের বড় ভবনটাতেই উঠতে পারলেই হয়তো আকাশ ছোঁয়া যাবে! কিন্তু মা’ই ঠিক বলেছিলেন।

বাবা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। মা সিলেটের একটি কলেজে অধ্যাপনা করতেন। আমাকে ঘিরে মার বড় ত্যাগ। বাবাকে একা রেখে চলে আসেন ঢাকায়।

সাংসারিক প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেন মা’র মতেই। বাবাও ছেড়ে দিয়েছেন সব কিছু। মা ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। বাবা সিলেটে। সেই থেকে মা’কে ঘিরেই চলতে থাকে সব।

মাকে আমি কখনোই বোঝাতে পারিনি তার জন্য আমার মনটি কেমন করে কাঁদে! যেমনটি কাঁদে অন্য সন্তানদের।

মনে পড়ে, ঢাকায় আসার পর, মা যখন বাবার কাছ থেকে ফোনে জানতে পারেন, জুনিয়র (৮ম শ্রেণির বৃত্তি) পেয়েছি, তখন অনেক কেঁদেছিলেন। আমি পড়াশোনা থেকে দুষ্টুমিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছি। আমার এসএসসি ও এইচএসসি ফল প্রকাশের দিনই মা কেঁদেছিলেন। কারণ ততোদিনে, আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিই বলেই মার মূল্যায়ন ছিল। যার কারণে আমার ফল নিয়ে মার ছিল যতো দুশ্চিন্তা।

তবে যখন ব্যর্থ হয়েছি, মা তখন পাশে থেকে বলেন, জীবনটা সব সময় নিজের মতো হয়না। বড় উদাহরণ, মস্কোয় (রাশিয়া) স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়ে পড়াশোনা শেষ না করে দেশে ফেরার ঘটনা। আমার ব্যর্থতাগুলোতে মা না-কি সাফল্যের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান।

সবশেষ, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জীবন। একটি প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্বে পড়ি। মা তখন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তখনো বলেছেন, জীবন থেমে থাকে না বাবা, সমস্যার মধ্যেও এগিয়ে যেতে হবে। এমনটি মা ছাড়া আর কেউ করতে পারে কি?

মায়ের কাছ থেকে প্রতিমুহূর্তেই আমরা শিখছি। জীবনের প্রতিটি অংশেই তো তিনি জড়িয়ে আছেন। এমন কিছুই নেই, যেখানে মা নেই। কাজে, লেখাপড়ায়, মানবিকতার শিক্ষায় সবকিছুর হাতেখড়ি মায়ের কাছ থেকেই। মজার বিষয় হলো, মাকে ঘিরে বিশেষ কোনো স্মৃতি আলাদা করে মনে পড়ে না। কারণ, অবচেতন মনেই মায়ের সব কথা, সব কিছু মনে গেঁথে যায়। মায়ের কাছ থেকে আমরা নিষ্ঠার পাঠ নিতে চেষ্টা করি।

ভাই-বোনের শিক্ষায় ব্যয় মেটাতে সংসারে টানাপোড়েন। কখনো সেভাবে কাজের মানুষ ছিল না। ঘরের প্রতিটি কাজ মাকে করতে দেখেছি। এমনও দেখেছি, কলেজ থেকে ফিরেই রান্নাঘরে চলে গেলেন। আমার মা একজন শাশ্বত মায়ের প্রতিচ্ছবি। জগৎ-সংসারের প্রতিটি মা-ই এমন মমতাময়ী। শত বেদনা সয়েও সন্তানের জন্য মায়ের অকৃত্রিম মমতা চিরদিনই দেখা যায়।

যদি প্রশ্ন হয় কোন শব্দে সবচেয়ে বেশি আকুলতা, বেশি আবেগ, নিবিড় টান আছে, বিতর্ক ছাড়াই একটি উত্তরই আসবে পৃথিবীজুড়ে ‘মা’। একটি আশ্রয়ের নাম ‘মা’। একটি শব্দই মনে করিয়ে দেয় অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসার কথা। শুধু বিশেষ দিন নয়; মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রতিটি দিনের। প্রতিটি ক্ষণের। মায়ের জন্য বিশেষ দিন থাকার দরকার আছে কি-না জানি না। তবে, একটি বিশেষ দিনে না হয়, মাকে একটু বেশিই ভালোবাসি। যারা আজও বলেননি, মা তোমাকে ভালোবাসি। তারা না হয়, আজ, ভালোবাসার কথাটি মুখ ফুটে বলুন।

বিশ্বের নানা প্রান্তে রোববার পালিত হচ্ছে মা দিবস। হয়তো মায়ের হাতে মা দিবসের কার্ড দিয়ে কিংবা মায়ের প্রিয় রঙের শাড়িটি তুলে দিয়ে। অথবা মাকে চমকে দিয়ে তার প্রিয় খাবারটি নিজের হাতে রান্না করে। অপরিশোধ্য মাতৃঋণের বদলে মাকে ক্ষণিকের আনন্দ দিয়ে খুশি হবে সন্তানেরা। দূরে থাকা মায়ের ছোঁয়া যারা পাবেন না, তারা দ্বারস্থ হবেন মুঠোফোনের।

আজ সেই দিনটিতে বলছি, মা, তোমার জন্য...। তোমার জন্যই সবকিছু।
আর পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন তুমিই।

এসএ/বিএ/এসআরজে

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।