মাটির ঘর শুধুই পূর্বপুরুষের স্মৃতি

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:৩২ পিএম, ১৭ মে ২০২৩

গ্রাম বাংলার আদি ঐতিহ্য মাটির ঘর। চারদিক মাটির দেয়াল, উপরে টিন বা ছনের ছাউনি বয়োজ্যেষ্ঠদের মনে করিয়ে দেয় তাদের শৈশব। কনকনে শীতে ঘরের ভেতর উষ্ণ পরিবেশ ও গরমকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করায় মাটির ঘর গরিবের কাছে যেমন আরামের তেমনি ধনীদের কাছে ছিল বিলাসিতা। তবে যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে অস্তিত্ব বিলীনের পথে মাটির ঘর।

এক সময় মফস্বলের প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যেত এই মাটির ঘর। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পূর্বপুরুষের তৈরি ঘরগুলো এখন ইট, বালু, রড, সিমেন্টের ঘরে রূপান্তরিত হচ্ছে। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা করছেন টিনের ঘর।

ঘরগুলোর নির্মাণ কৌশলও কত সুন্দর! পানির সঙ্গে মাটির প্রলেপ মিশিয়ে লেপে নিলেই কোনো ফাটল দেখা যায় না। কোনো কোনো সময় অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরগুলো বেশি নষ্ট বা ফেটে গেলে সিমেন্ট দিয়েও লেপে দেওয়া যায়।

আরও পড়ুন: উট কেন বিষধর সাপ খায়? 

jagonews24

যারা মাটির ঘর নির্মাণ করেন তারা ‘দেল বারুই’ নামে পরিচিত। সচরাচর এঁটেল মাটি দিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হয়। পরিচ্ছন্ন মাটির সঙ্গে পানি মিশিয়ে কাদায় পরিণত করে ইটের মতো সারি সারি করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল তৈরি করা হয়। প্রতিবারে এক-দেড় ফুট উঁচু করে ক্রমে শুকিয়ে গেলে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেওয়া হতো। প্রতিটি ঘর তৈরিতে দেড়-দুই মাসের মতো সময় লাগে। তবে মুষলধারে বৃষ্টিতে মাটির ঘরের স্বাভাবিক কাঠামো নষ্ট হওয়ায় লোকজন এই ঘর তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

পূর্বপুরুষের স্মৃতি হিসেবে এখনো বেশ কিছু জায়গায় মাটির ঘর দেখা যায়। রুপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা ইউনিয়নের পাচাইখাঁ এলাকায় এখনো কিছু মাটির ঘর রয়েছে। একচালা ঘরগুলোর চারদিক দেয়াল উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ঘরগুলো দেখতে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর।

এছাড়াও নওগাঁয় রয়েছে ১০৮ কক্ষের মাটির প্রাসাদ। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে ৩৩ বছর ধরে টিকে আছে বাড়িটি। এছাড়াও বগুড়ার নন্দীগ্রামে ১২ শতক জমির উপর তিনতলা মাটির ঘর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।