পুরো বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলাসহ স্বাস্থ্যসেবায় নানা সফলতা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমাদের সফলতা অন্যদেরও যেমন কাজে লাগবে, তেমনি অন্য দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নমূলক কাজগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাতেও কাজে লাগবে। এভাবে একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন থেকে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে সবাইকে একযোগে এক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকালে থাইল্যান্ডের পাতায়া এক্সিভিশন অ্যান্ড কনভেনশন হলে পার্টনার্স ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) আয়োজিত বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধি পর্যায়ের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক ১৯তম আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকার পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
মন্ত্রী এসময় বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, করোনা পরিস্থিতি, বিনামূল্যে হাসপাতাল সেবা কার্যক্রমসহ স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে বলেন, বাংলাদেশ ২০২২ সালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। শিশুমৃত্যু হার প্রতি ১ হাজারে ২০০৯ সালে ২৮ জন থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ১৫ জনে নেমে এসেছে। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমানে প্রায় ৫০ ভাগ শিশু মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৪ ভাগ নারী (১৫-৪৯ বছর বয়সী) গর্ভনিরোধ পদ্ধতিসেবা সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাচ্ছেন। মাতৃমৃত্যুর হার ২০০৯ সালে প্রতি লাখে ২৫৯ জন থেকে কমিয়ে এখন ১৬৩ জন হয়েছে। শিশুদের সময়মতো ভ্যাকসিন প্রদান করে বাংলাদেশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাভি কর্তৃক ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাস্থ্য প্রজনন সেবার উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার, ২০১১ সালে ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট নামে সাউথ-সাউথ পুরস্কার পাওয়াসহ নানা পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। করোনা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে গঠনমূলক কাজ করার মাধ্যমে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দরিদ্রপিড়ীত দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ক্ষতি হচ্ছে। বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে সভায় তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এগুলো নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সবাইকে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় জিম্বাবুয়ের উপ-রাষ্ট্রপতি এইচ ই ডা. সি চিওয়েংগা (H.E Dr. C. Chiwenga), ভারতের মিনিস্ট্রি অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার’র ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ ডিভিশনের অ্যাডভাইজার এইচ ই ডা. এস কে সিকদারসহ ২৭টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় পিপিডি-এর ২৭টি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের ও প্রতিনিধি পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ দেশের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, শিশু শ্রম বন্ধ, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যহানীসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা এসব বিষয়ে একমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য প্রজনন সেবার উন্নয়ন চিত্র ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত এক দেশ অন্য দেশের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিজ দেশে কাজে লাগাবেন বলে জানান।
২৭টি দেশের আন্তর্জাতিক সংগঠন পিপিডি’র প্রধান কার্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থায়ীভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশে নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেনিয়ার নাইরোবি সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উদ্যোগ নেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান মন্ত্রী জাহিদ মালেক পিপিডি কার্যালয়টির কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু করতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।
বর্তমানে সদস্য দেশগুলোর আর্থিক অনুদানের ভিত্তিতে ওই কার্যালয়ে বিশ্ব প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজগুলো চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পিপিডি’র পার্টনার কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. আশরাফি আহমেদ কর্মরত রয়েছেন।
এএএম/ইএ/এমএস