তীব্র গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, আগাম প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪

গাজীপুরের বাসিন্দা নাজমা তার এক বছরের শিশু আবদুল্লাহকে নিয়ে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এসেছেন। তার ছেলের পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমিও হচ্ছে। ১৭ বছর বয়সী মইনুদ্দিনও দুদিন ধরে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি।

ফার্নিচারের দোকানে কাজ করা মইনুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরশু হোটেলে রাতের খাবার খাই। গতকাল সকাল থকে পেট ব্যথা শুরু হয়। এরপর পাতলা পায়খানা। শরীর অনেক দুর্বল। অবস্থা খারাপ দেখে পরিবারের সদস্যরা এখানে নিয়ে আসেন। এখনো হালকা পেটব্যথা রয়েছে।’

পাশের বেডে থাকা সোহেলও গাজীপুর থেকে এসেছেন তার ১৬ মাস বয়সী সন্তান সামিকে নিয়ে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০ তারিখ বিকেলে হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাইয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও ঠিক হচ্ছিল না। বাচ্চা বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। পরদিন ভোরেই তাকে কলেরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’

তীব্র গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, আগাম প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা

সারাদেশের মানুষেরই তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস অবস্থা। ঘরে কিংবা বাইরে স্বস্তিতে নেই মানুষ। এই গরম থেকে একটু আরামের জন্য মানুষ রাস্তাঘাটে বরফ দেওয়া শরবত খাচ্ছেন। বাইরের খোলা ফলমূলও খাচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকে বরফ শীতল বা ঠান্ডা পানি সরাসরি খাচ্ছেন। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ বেড়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে রাজধানীর আইসিডিডিআর,বি বা কলেরা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে স্বজনদের ভিড়। একজন রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন ঢুকতে দেয় না প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি বিভাগে রোগীদের প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়া রোগী হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হচ্ছে আসলে রোগী কী ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। এরপর তাদের অবস্থা বিবেচনা করে স্যালাইন দেওয়া কিংবা ভর্তি করানো হচ্ছে। কিছু রোগীকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠাতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনু্যায়ী, মাঝে কয়েকদিন দিনে পাঁচশর নিচে রোগী থাকলে গত দুদিন পাঁচশ ছাড়িয়েছে। ১৬ এপ্রিল ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয় ৪৭৪ জন রোগী, ১৭ তারিখ ৪৩২ জন, ১৮ তারিখ ৪৪৫ জন, ১৯ তারিখ ৪৫৬ জন, ২০ তারিখ ৫৪৩ জন, ২১ তারিখ ৫২২ জন ও সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।

বিশেষত মে-জুন ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে এই তীব্র গরম সপ্তাহজুড়ে থাকতে পারে। তাই আমরা আশঙ্কা করছি এবছর অতিরিক্ত গরম পড়ায় যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মে-জুনে দেখা যাওয়ার কথা সেটা আরও আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচশর মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে।- আইসিসিডিআর,বির গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট ডা. নিগার সুলতানা

আইসিসিডিআর,বির গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট ডা. নিগার সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশেষত মে-জুন ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে তীব্র গরম সপ্তাহজুড়ে থাকতে পারে। তাই আমরা আশঙ্কা করছি এবছর অতিরিক্ত গরম পড়ায় যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মে-জুনে দেখা যাওয়ার কথা সেটা আরও আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচশর মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে।’

তীব্র গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, আগাম প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা

কোন বয়সী রোগী বেশি ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে সব বয়সের মানুষই ভর্তি হচ্ছে। তবে এই সময়ে শিশুদের ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যেমন, বাইরের খোলা শরবত খাচ্ছে, সেখানে যে বরফ থাকে তাতে প্রচুর জীবাণু থাকতে পারে।’

তীব্র গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, আগাম প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা

‘এছাড়া বাইরে থেকে এসে কিংবা পায়খানা করে সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে না। গরমে মানুষের প্রচুর পরিমাণে ঘাম হচ্ছে, কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করছে না। এই প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই সাধারণ মানুষকে মাথায় কাপড় বা টুপি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের প্রয়োজন নেই তাদের ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। এছাড়া যারা শ্রমজীবী তাদেরও এক টানা বেশিক্ষণ কাজে থাকা উচিত নয়।’

তীব্র গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, আগাম প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা

ডায়রিয়ার সঙ্গে শিশুদের অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ার সঙ্গে অনেকের নিউমোনিয়া, কিডনি বা হার্টের সমস্যা থাকতে পারে। আমরা ডায়রিয়া পরীক্ষা করার পর তাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রেফার করি, যাতে তাদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি না হয়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় দেশের এক লাখ ৭০ হাজার ২৭৬ জন। এদের মধ্যে মারা যান ৩১ জন। ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয় এক লাখ ৫৬ হাজার ৭২১ জন। মৃত্যু হয় ১২ জনের। ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৬ হাজার ৪৪৪ জন। তবে এসময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।

এএএম/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।