স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লিফটে দুর্ঘটনা

নিউরোসায়েন্সের লিফট রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা পেলো তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩০ পিএম, ২১ মে ২০২৪

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ৩১ মার্চ লিফটে আটকে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এ ঘটনায় লিফট রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা ও অপারেটরের প্রশিক্ষণ না থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লিফটটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে প্রায় ১২ বছর যাবৎ ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি।

তদন্ত কমিটির পরিদর্শনকালে লিফটটি চলাচলে কোনো সমস্যা পাওয়া না গেলেও লিফট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য ও অন্যান্য তথ্যাবলী পর্যালোচনা করে বেশ কিছু ত্রুটি পাওয়া যায়। এগুলো হলো-

১. গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৭, ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ই/এম) এবং সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী (ই/এম) লিফট রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্দেশ প্রদান করলেও যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কাজ তদারকিতে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।

২. লিফট পরিচালনার জন্য স্থিতিশীল ভোল্টেজ সম্বলিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে স্থাপিত অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটর (এভিআর) ডিভাইসটি অকেজো।

৩. লিফট চলাচলের সময়ে কোনো কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে বা অন্য কোনো কারণে লিফট দুই ফ্লোরের মধ্যবর্তী স্থানে বন্ধ হয়ে গেলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকটস্থ ফ্লোরে লিফট নিয়ে যাওয়ার জন্য অটোমেটিক রেসকিউ ডিভাইস (এআরডি) নেই।

৪. লিফটের মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত কন্ট্রোল প্যানেল মাইক্রোপ্রসেসর ও বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তৈরি যা নির্ধারিত তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহারে কন্ট্রোল রুমে এয়ার কুলার স্থাপন করা হয়ে থাকে। কন্ট্রোল রুমে এয়ারকুলার বিদ্যমান থাকলেও অকেজো অবস্থায় রয়েছে।

৫. লিফট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে লিফটটিতে অতিরিক্ত লোক উঠলেও ওভার লোড সেন্সর কাজ করেনি। বিদ্যুৎ সরবরাহ সিস্টেমে ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েট বা অন্য কোনো ত্রুটিজনিত কারণে নির্দিষ্ট লেভেলে থামার জন্য সুইচ বা কন্ট্রোলার যথাযথভাবে কাজ না করায় নির্ধারিত লেভেলে থামতে পারেনি।

৬. নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব ডিভাইসগুলো ও ফাংশনসমূহ মাসিক ভিত্তিতে পরীক্ষা করা প্রয়োজন সেসব পরীক্ষা যথাযথভাবে হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৭. সার্ভিসিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের ওপর একক নির্ভরতা এবং কাজের সময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৮. সাইটে অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স ম্যানুয়াল, অভিযোগ রেজিস্টার, সার্ভিসিং, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ হিস্টরি বুক ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়নি।

৯. প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও অপারেটর নিয়োগ করা হয়। এমনকি নিয়োগের পরও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি।

তদন্ত কমিটির ৯ দফা সুপারিশ

১. সংশ্লিষ্ট লিফট ম্যানুফেকচারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ডিভাইস ও ফাংশনগুলো মাসিক ভিত্তিতে যথাযথভাবে গণপূর্ত অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পরীক্ষা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা।

২. সেফটি ডিভাইসগুলোর মধ্যে একটি বা একাধিক ডিভাইস অকেজো হলে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় লিফট বন্ধ রাখা বা ব্যবহার না করা।

৩. এআরডি স্থাপন করা, এভিআর ও এয়ার কুলার মেরামত বা স্থাপনের ব্যবস্থা করা।

৪. সার্ভিসিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের ওপর একক নির্ভরতা কমাতে বা কাজের গুনগতমান নিশ্চিতে গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।

৫. সাইটে অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স ম্যানুয়াল, অভিযোগ রেজিস্টার, সার্ভিসিং, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ হিস্টরিবুক ইত্যাদি সংরক্ষণ করা।

৬. লিফটের দরজা আওতাভুক্ত করে প্রতিটি ফ্লোর সিসিটিভি সিস্টেমে নিয়ে আসা।

৭. যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো লিফট অপারেটর দ্বারা লিফট পরিচালনা না করা।

৮. সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী) হাসপাতালে ভিভিআইপি বা ভিআইপি আগমনের সময় অধিকতর সর্তকতা অবলম্বন করা।

৯. লিফট একটি ভার্টিক্যাল পরিবহন বিধায় অন্যান্য পরিবহনের ন্যায় ব্যবহারের পূর্বে ছাড়পত্র প্রদানের এবং ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া।

এর আগে ৩১ মার্চ নিউরোসায়েন্সেসে এক আলোচনা সভায় যোগ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সভা শেষে ৯-১০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১০তলা থেকে নিচে নামার লক্ষ্যে লিফটে ওঠেন তিনি। লিফটটি যাত্রা শুরু করে দ্বিতীয় তলার কাছাকাছি আসার সময় তারা একটি শব্দ শুনতে পান এবং লিফটটি থামার সময়ে আর একটি শব্দ শুনতে পান। লিফটটি থামার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা না খোলায় দায়িত্বরত লিফট অপারেটর পাশের লিফটের দায়িত্বে নিয়োজিত অপারেটরের সহায়তায় প্রায় ৭ থেকে ৮ মিনিট পর দরজা খোলার ব্যবস্থা করেন।

দরজা খোলার পর দেখা যায় লিফটটি নির্ধারিত নিচতলার মেঝের সমতলে না থেমে মেঝে থেকে অনেকটা নিচে থেমেছে। এ পরিস্থিতিতে লিফট অপারেটরের নির্ধারিত টুলের (বসার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা) সহায়তায় মন্ত্রীসহ লিফটে অবস্থানরত অন্যান্য কর্মকর্তাদের বের করে আনা হয়। এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী উষ্মা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এএএম/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।