জুলাই বিপ্লবে চক্ষু হাসপাতালের তিন লড়াকু চিকিৎসক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অনেকেই হারিয়েছেন দুই চোখের আলো। কেউবা অস্ত্রোপচারের পর এক চোখেই দেখছেন নতুন বাংলাদেশকে।
জুলাই বিপ্লবের নির্মমতার সাক্ষী রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এখানে এক হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ৫৭৮ জনের। দুই চোখেই গুলি লেগেছে প্রায় ৭০ জনের। দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেছে ৩৯ জনের। এক চোখ হারিয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এখনো অনেকের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালটিতে।
আহতদের চিকিৎসায় নিরলস শ্রম দিয়েছেন অনেক চিকিৎসক। কারফিউর মধ্যে হেঁটে হাসপাতালে এসে এবং নির্ধারিত কর্মঘণ্টা শেষেও হাসপাতালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন কেউ কেউ। আহতদের সুস্থ করতে এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন তারা।
- আরও পড়ুন
ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী চিকিৎসকরা আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেননি - পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের ক্ষোভের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
- জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন
- আন্দোলনে আহত ৭৫ শতাংশ ছাত্র-জনতা বিষণ্নতায় ভুগছেন: জরিপ
জুলাই বিপ্লবে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে থেকে পুরো চিকিৎসা কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়া লড়াকু তিন চিকিৎসকের অবদান তুলে এনেছে জাগো নিউজ। তারা হলেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল, ভিট্রিও রেটিনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেজবাহুল আলম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসঙ্গে এত রোগীকে সেবা দেওয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এটা করতে পেরেছি। আমরা আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়েছি। টিমে আমার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করেছেন সহকারী পরিচালক ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল ও সহকারী অধ্যাপক ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা। ভিট্রিও রেটিনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেজবাহুল আলম, ডা. শহীদ ও কৌশিক চিকিৎসার দিকটি দেখেছেন। পুরো টিমের সেবায় আমি সন্তুষ্ট। আশা করি রোগী ও তাদের স্বজনরাও সন্তুষ্ট।’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা থেকে দুই চোখে গুলি নিয়ে এসেছেন রবিন খান (২২)। তার বাবা শরীফুল ইসলাম খান বলেন, ‘এক বিভীষিকাময় মুহূর্তে এই হাসপাতালে এসেছিলাম। কোথাও চিকিৎসা না দিলেও এখানে দিয়েছে। বিশেষ করে ডা. মেজবাহুল আলম স্যারের কথা বলতেই হবে। তিনি অপারেশন করেছেন। সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়েছেন। এখনও নিচ্ছেন।’
নেত্রকোনার মদন উপজেলার মগরা নদীর ব্রিজে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলা এবং গুলিতে আহত হয়ে ১৮ জুলাই রাতে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আসেন মেহেদী হাসান মিন্টু। তিনি বলেন, ‘তখন তো চিকিৎসা দিতে চাইতো না। নীলা ম্যাডাম ভর্তি নিছেন, চিকিৎসা দিছেন। ওই রাতে চার ঘণ্টা বসে থেকে চিকিৎসা দিয়েছেন। দুটো গুলি ছিল চোখে, একটা বের করছেন। আরেকটা আছে, ওটা বের করতে গেলে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ম্যাডাম এখন পর্যন্ত সবকিছু দেখছেন আন্তরিকতার সঙ্গে, এতে আমি সন্তুষ্ট।’
গুলিবিদ্ধ রোগীদের ভরসার জায়গা ডা. সোহেল
১৭ জুলাই থেকেই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রোগী আসতে শুরু করে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে। ১৮ জুলাইকে জাতি মনে রাখবে নির্মমতার এক চরম স্মারক হিসেবে। সেদিন শত শত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীর ঠিকানা হয় এ হাসপাতালে। দুপুরের পর থেকেই আসতে শুরু করে গুলিবিদ্ধ শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ। চারদিকে ত্রাসের রাজত্ব, আহতদের নানাভাবে মারপিট ও হেনস্তা করা হয়। অস্ত্র হাতে পাহারায় ছিলেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই পরিস্থিতিতে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট কিছুটা ব্যতিক্রম।
- আরও পড়ুন
- আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় থাইল্যান্ডের চিকিৎসকদল
- যতদিন প্রয়োজন ততদিন আহতদের চিকিৎসা দেবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা-পুনর্বাসনসহ ১৫ দাবি
- ছাত্র-আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ঢাকায় যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক দল
তখন জরুরি বিভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন দায়িত্বরতরা। তাদের একজন ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল। তিনি বলেন, ‘দুপুরের মধ্যেই ওইদিন ডিউটি শেষ হয়। বারবার অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ পেয়ে নিচে নেমে যাই। একদিকে আহতদের আর্তনাদ, আরেকদিকে ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী। মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নেই আজ বাসায় ফিরবো না। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালের গেটে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করি সন্ত্রাসীদের।’
‘একদিকে রোগীদের রিসিভ করছি। সতীর্থদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। তাদের অভয় দিচ্ছি। আবার হাসপাতালের সামনেই সন্ত্রাসীদেরও প্রতিরোধ করছি। ১৮-১৯ জুলাইয়ের পর কারফিউর দিনগুলোতেও হাসপাতালে এসে হাজির হই। পিএলআইডির রোগী হয়েও দীর্ঘ পথ হেঁটে আসি। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, চিকিৎসা সেবা যেন সচল থাকে।’
ডা. সোহেল বলেন, ‘প্রথম কারফিউর সময় থেকে ফ্যাসিবাদের দোসর নন এমন চিকিৎসকদের ওপর নেমে আসে চরম নির্যাতন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এতে পিছপা হননি ফ্যাসিবাদবিরোধী চিকিৎসকরা। দুর্বার গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজপথে আর পাশাপাশি চলতে থাকে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালের কাজ শেষে আন্দোলনে, এভাবেই চলে আমাদের দিন। আগস্টের ৫ তারিখও ছিলাম মুক্তির মিছিলে। কিন্তু কর্তব্যের ডাকে বিকেল ৫টায় আবার হাসপাতালে ছুটে আসি।’
- আরও পড়ুন
- আহতরা পাবেন ইউনিক আইডি, সরকারি হাসপাতালে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা
- আহতদের চিকিৎসায় এবার ডেনমার্কের সহায়তা চাইলেন ড. ইউনূস
- আহতদের চিকিৎসায় ৫ কোটি টাকা দিয়েছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন
- ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর বঞ্চনার শিকার ছিলাম। বদলি হয়েছি তিন মাসে ৯ বার। বেতনহীন কাটিয়েছি সাড়ে তিন বছর। পোস্ট গ্রাজুয়েশনে চান্স পেয়েও শেষ করতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছি। পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ও স্নেহের ডা. যাকিয়া সুলতানার নীলার কো-অরডিনেশনে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আহতদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ডা. সোহেল বলেন, পরিস্থিতি তো এখন অনেক ভালো। কিন্তু আন্দোলনের দিনগুলো ছিল ভয়ংকর। রোগী ও চিকিৎসক সবার মধ্যে ছিল আতঙ্ক। হাসপাতালে এসে ঢুকলে রোগীরা বলতেন, ‘স্যার আপনি আসছেন? আপনি এলে ভরসা পাই।’ তখন কি আর নিজেকে ধরে রাখা যায়?
আপনার মতো ডাক্তার যাতে এই দেশে আরও তৈরি হয়
ডা. মেজবাহুল আলম জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভিট্রিও রেটিনা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ১৭ জুলাই থেকেই আন্দোলনে আহত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি। তীব্র প্রতিকূল পরিবেশেও পিছপা হননি এই চিকিৎসক। আহতদের সেবা দিয়েছেন। একের পর জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন। আর্থিক সাহায্যও দিয়েছেন। তার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়েছেন অনেকে। পরে তাদের রেটিনার অস্ত্রোপচারও করেছেন। এখন সিমপ্যাথেটিক অফথালমাইটিসের চিকিৎসাও তিনি দিয়ে যাচ্ছেন।
বিরামহীনভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডা. মেজবাহুল আলম। ৫ আগস্টের পর চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একাডেমিক ফেলো কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। সামনের দিনে বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে চান তিনি। এদেশের মানুষের কষ্টার্জিত এই বিজয়কে তিনি শক্তিতে পরিণত করতে চান।
জাগো নিউজকে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে তাদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছি। তবে যা হারিয়েছে, তা তো ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। দিনশেষে রোগী ও তাদের অভিভাবকরা যখন বলেন, আপনার মতো ডাক্তার যাতে এই দেশে আরও তৈরি হয়। এটাই আমাদের প্রাপ্তি। আহতদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করি। এই দেশে যাতে আর কোনোদিন কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে এই দোয়া করি।’
‘আপনাকে শহীদদের সঙ্গে জান্নাতে নিয়ে যাবো’
ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভিট্রিও রেটিনা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। ১৮ থেকে ২০ জুলাই তিন শতাধিক রোগী চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেন।
- আরও পড়ুন
- জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
- গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের আজীবন বেতন-টিউশন ফি মওকুফ
- গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের তালিকা প্রকাশসহ ৯ দাবি
- হেলথকার্ড পেলেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধারা
ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা বলেন, ‘১৮ জুলাই দুপুর ৩টার পর থেকে আহত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় হাসপাতালে। প্রচুর রোগী চোখে গুলি নিয়ে আসে। ভয়াবহ সেই চিত্র দেখার পূর্বঅভিজ্ঞতা হাসপাতালের কারও ছিল না। আহতদের অনেকের বয়স ১২ থেকে ২৫ এর মধ্যে। কারও এক চোখ, কারও দুই চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। সঙ্গে সঙ্গে আট টেবিলে ওটি শুরু করি আমরা। ১৮ জুলাই থেকে চারদিন চলে ম্যারাথন ওটি।’
‘কারফিউর মধ্যেও হাসপাতালে এসেছি। আন্দোলনে অংশ নিতে একদিকে শাহবাগের গণজমায়েত আর চক্ষুবিজ্ঞানের চিকিৎসাসেবা এই নিয়ে ছিল আমার দিন। আগস্টের ৫ তারিখ সবাই যখন বিজয় মিছিলে তখনো আমি হেঁটে চলে আসি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। প্রতি মিনিটে একজন করে রোগী আসছিল বিকেল ৪টা থেকে। রাত পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা সেবার কাজে ছিলাম। ৫ আগস্টের আগে এই চিকিৎসা দিতে গিয়ে হুমকির শিকারও হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিল ফ্যাসিবাদের দোসররা। কিন্তু পিছপা হইনি।’
ডা. নীলা বলেন, ‘ছররা গুলি আর জীবননাশের রিয়েল বুলেটবিদ্ধ রোগী আসে প্রচুর। প্রথমে তাদের প্রাইমারি রিপেয়ার হয়েছে। পরে তাদের রেটিনার অপারেশন হয়েছে। ট্রমাটিক অপটিক নিউরোপ্যাথি ও ট্রমাটিক ক্যাটারেক্টের চিকিৎসা হচ্ছে এখন। এই মুহূর্তে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আহতদের চিকিৎসাসেবার কো-অরডিনেশনের কাজ করছি। পাশাপাশি চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একাডেমিক কো-অরডিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।’
তিনি বলেন, দুঃসময় কেটে গেলেও এখনো রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি। এখনো গুলির শব্দ পাই অবচেতন মনে। রোগীরা যখন জিজ্ঞেস করে সে কবে চোখে দেখবে তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। চোখ ছলছল করে। কোথাও ওদের নিয়ে কথা বলতে গেলে চোখের পানি আটকাতে কষ্ট হয়। যাদের ত্যাগে এই বাংলাদেশ, তাদের রাষ্ট্রীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হোক। আমাদের কিছু দরকার নেই। এটাই প্রাপ্তি যখন রোগীরা বলে, ‘আপা আমি আপনাকে আহত আর শহীদদের সঙ্গে জান্নাতে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।’
এসইউজে/এসআইটি/এমএমএআর/জেআইএম