আন্তর্জাতিক

রাশিয়ায় হামলা: যুদ্ধের নিয়ম বদলে দিলো ইউক্রেনের অপারেশন ‘স্পাইডার ওয়েব’

রাশিয়ায় হামলা: যুদ্ধের নিয়ম বদলে দিলো ইউক্রেনের অপারেশন ‘স্পাইডার ওয়েব’

রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্ক প্রদেশে গত ১ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এক বিস্ময়কর ঘটনার খবর—টায়ারের দোকানে আসা একটি লরি থেকে বেরিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন এবং উড়ে যায় রাশিয়ার একটি কৌশলগত বিমানঘাঁটির দিকে। একই ধরনের ভিডিও ও বিবরণ পাওয়া যায় রুশ আকাশসীমার উত্তর মুরমানস্ক, রিয়াজান ও ইভানোভো অঞ্চলের বিমানঘাঁটিগুলোর দিক থেকেও। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের এ ধরনের বিস্তৃত ও সমন্বিত হামলা এবারই প্রথম।

Advertisement

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ জানায়, তারা এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘স্পাইডার ওয়েব’। এর মাধ্যমে তারা রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে অন্তত ৪১টি বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে—যার মধ্যে রয়েছে বিরল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ-৫০(রাশিয়ার নিজস্ব এডব্লিউএসিএস), টিইউ-২২এম৩ এবং টিইউ-৯৫ দূরপাল্লার বোমারু বিমান। সংস্থার প্রধান ভাসিলি মালিউক ভিডিওতে বলেন, ‘রুশ কৌশলগত বোমারুগুলো দারুণভাবে জ্বলছে।’

আরও পড়ুন>>

রাশিয়ায় দফায় দফায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা রাশিয়ার তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা এক রাতেই ইউক্রেনের শতাধিক ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া

এই হামলা শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের চতুর্থ বছরে সবচেয়ে বড় আঘাতগুলোর একটি নয়, বরং এটি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ ড্রোন নেটওয়ার্ক এবং রাশিয়ায় তাদের গুপ্তচর কার্যক্রম কতটা গভীরে পৌঁছেছে, তারও প্রমাণ। ধারণা করা হচ্ছে, হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১৫০টি ড্রোন ও ৩০০টি বোমা, যেগুলো রাশিয়ায় গোপনে পাচার করা হয়েছিল। ড্রোনগুলো কাঠের কেবিনে লুকিয়ে ট্রাকে তোলা হয়েছিল এবং দূর থেকে ছাদ খুলে দিয়ে সেগুলো ওড়ানো হয়।

Advertisement

ড্রোনগুলোর ফুটেজ রুশ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইউক্রেনে পাঠানো হয় এবং পরে সেগুলোর কিছু প্রকাশ করে ইউক্রেন। এসব ড্রোনে স্বয়ংক্রিয় নিশানার ব্যবস্থাও ছিল বলে দাবি গোয়েন্দা সূত্রের।

এই অভিযানের একটি কৌশল ছিল রাশিয়াকে ভুলপথে চালিত করা। আগেই ইউক্রেন কিছু ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যাতে রাশিয়া তাদের কৌশলগত বিমান সরিয়ে নেয় নিরাপদ ভেবে মুরমানস্কের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটিতে। সেখানেই সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়।

রাশিয়ার বর্তমান কৌশলগত বোমারুর সংখ্যা ৯০টিরও কম বলে ধারণা করা হয়, যার অনেকগুলোই পুরোনো এবং আর তৈরি হচ্ছে না। এই বিমানগুলো ইউক্রেনে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই সেগুলো ইউক্রেনের জন্য উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু।

এই হামলার ঠিক একদিন পর, ২ জুন ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই হামলা হয়তো শান্তি উদ্যোগকে আরও কঠিন করে তুলবে। রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে পার্ল হারবার হামলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এমনকি এক শীর্ষ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা স্বীকার করেন, এই ধরনের আক্রমণ পশ্চিমা মিত্রদের বিরক্ত করতে পারে।

Advertisement

তবে পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কারণ, অনেক দেশ তাদের কৌশলগত বিমানগুলো খোলা ঘাঁটিতে রাখে, যা ড্রোন হামলার জন্য সহজ লক্ষ্য। সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি (সিএনএএস)-এর বিশ্লেষক টম শুগার্ট বলেন, যদি বন্দর বা রেলস্টেশনে রাখা কনটেইনারগুলো থেকে একসঙ্গে হাজারো ড্রোন বের হয়ে বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়, তাহলে তা পুরো যুদ্ধের ধারা বদলে দিতে পারে।

এই অভিযানের মাধ্যমে যুদ্ধের নতুন রূপ ফুটে উঠছে—যেখানে অদৃশ্য প্রতিপক্ষ, গোপন ঘাঁটি, বেসামরিক যানবাহন ও স্মার্ট প্রযুক্তি মিলিয়ে রণকৌশলের প্রথাগত ধারা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিয়েছে ইউক্রেন।

কেএএ/