খেলাধুলা

‘বিদেশি লিগে খেলা ভালো মানের আরো ফুটবলার আনতে হবে’

‘বিদেশি লিগে খেলা ভালো মানের আরো ফুটবলার আনতে হবে’

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের পর প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও আলোচনা থেমে নেই। ম্যাচ হেরে যাওয়ার কারণ নিয়ে যেমন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, তেমন আলোচনায় ফুটবল ঘিরে অনেক দিন পর ফিরে আসা দর্শক উন্মাদনাও। ওই একটি ম্যাচ নিয়ে অনেক দিন পর দর্শকদের যে আগ্রহ দেখা গেছে তা নতুন করে আশা জাগাচ্ছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ খেলাটি নিয়ে।

Advertisement

সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ফুটবলে ফিরে আসা এই উন্মাদনা ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর সেটা ধরে রাখতে কি করতে হবে সে পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি। গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে দেশের ফুটবলে নতুন করে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত ছিল সিঙ্গাপুরের ম্যাচ পর্যন্ত।

আশরাফ উদ্দিন চুন্নু মনে করেন, হামজা চৌধুরীর আগমনই বদলে দিয়েছে দেশের ফুটবল। মানুষের প্রত্যাশা এখন আকাশচুম্বী। ফুটবল নিয়ে এই যে উচ্ছ্বাস, আনন্দ তা দেখে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই বলে মনে করেন দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই লেফট উইঙ্গার।

‘ফুটবল নিয়ে মানুষের এই যে ভালোবাসা নতুন করে জাগ্রত হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় দল এবং ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। এখন কোনো খেলা নেই। জাতীয় দলের খেলা অক্টোবরে, লিগও নেই। তাহলে ফুটবলাররা কি বসে বসে ফিটনেস হারাবেন? এখন উচিত খেলোয়াড়দের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করা। নির্ধারিত কিছু খেলোয়াড় ডেকে এই আয়োজন করা উচিত বাফুফের। তা না হলে খেলোয়াড়দের ফিটনেস কমে যাবে। আমরা কিন্তু বাফুফে থেকে তেমন উদ্যোগ দেখছি না। সে দিকে নজরও নেই। ফুটবলারদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য অফ সিজনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প আয়োজন জরুরি’ - বলেছেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু।

Advertisement

বিদেশে লিগ খেলা কয়েকজন ফুটবলার জাতীয় দলে যোগ হওয়ার পর বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা অনেকটাই বদলে গেছে। প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে। অনেকে এর বিরোধীতাও করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে চুন্নুর কথা পরিষ্কার। প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে যারা বিরোধীতা করছেন তাদের বিরোধীতা করে চুন্নু বলেন, ‘যারা এর বিরোধীতা করেন আমি তাদের বিরোধীতা করছি। আমি মনে করি, বিরোধীতাকারীদের ফুটবল জ্ঞানেরই ঘাটতি আছে। শুনেছি, কিউবা মিশেলসহ আরো কয়েকজন প্রবাসী ফুটবলার জাতীয় দলে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি মনে করি, কিউবা মিশেলসহ অন্যদের দ্রুতই আনা উচিত। বিদেশি লিগের এই ফুটবলারদের সাথে খেললে আমাদের ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা আরো বাড়বে।’

অন্য দেশে যারা লিগে খেলেন তারা যে পরিবেশে অনুশীলন করে তা অনেক উন্নতমানের উল্লেখ করে চুন্নু বলেছেন, ‘আমি হামজা চৌধুরীর কথা যদি বলি। তিনি কোন লেভেলে ফুটবল খেলেছেন সেটা বুঝতে হবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার তিনি। কিছুদিন আগে আমি চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ম্যাচ দেখছিলাম শেফিল্ড ও সান্ডারল্যান্ডের মধ্যে। হামজার পায়ে বল যাওয়ার পর ভাষ্যকার বলছিলেন বাংলাদেশি সুপারস্টার। আপনি ভাবতে পারেন বাংলাদেশের নাম কোথায় চলে গেছে। এমন আরো কিছু তারকা ফুটবলার আনতে পারলে এই দেশের ফুটবলেরই ব্র্যান্ডিং হবে। তারা অনেক ভালো পরিবেশে, ভালো সুযোগ-সুবিধায় অনুশীলন করেন। তাদের ফুটবল জ্ঞানও আমাদের ফুটবলারদের চেয়ে বেশি। তাই দলে বিদেশে লিগ খেলা যত ফুটবলার বাড়বে, আমাদের খেলার মানও ততো বাড়বে।’

গত বিশ্বকাপে মরক্কোর পারফরম্যান্সের প্রসঙ্গ তুলে আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেছেন, ’বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, বিভিন্ন দেশের লিগে খেলা ফুটবলারদের দলে নিয়ে মরক্কো দেখিয়ে দিয়েছে এর প্রয়োজনীয়তা। আরেকটি কথা হলো, অনেকে প্রবাসী বলে তাদের আলাদা করার চেষ্টা করেন। বাস্তব কথা হলো ওরা কিন্তু বাংলাদেশেরই সন্তান। যেখানেই খেলুক। সবার কাছেই দেশের সম্মান আগে। জাতীয় দলের রেজাল্ট ভালো হলে দেশের মুখই উজ্জ্বল হবে। হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে খেলছেন। আমি মনে করি তিনি তো নাও আসতে পারতেন। দেশকে ভালোবেসেই এসেছেন। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই। হামজা চৌধুরী, শামিত সোমরা যোগ হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওজনও কিন্তু বেড়ে গেছে। এক হামজার কারণেই ভারত সমীহ করেছিল বাংলাদেশকে।’

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটির অর্ধেক গ্যালারিতে বসে দেখেছেন চুন্নু। বাফুফে যেখানে সাবেক তারকাদের বসিয়েছেন তা নিয়ে ক্ষোভ ঢেলেছেন তিনি ‘বাফুফের আগের কমিটি কখনো আমাদের মূল্যায়ন করেনি। কোনো খেলা দেখতে আমন্ত্রণও করেনি। তবে এই কমিটি ম্যাচ দেখার টিকিট দিয়ে আমাদের অপমানই করেছে। দাওয়াত দিয়ে এমন অপমান করা হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার না। আমাদের এমন এক জায়গায় দেওয়া হয়েছিল যেখানে বসারও কায়দা ছিল না। প্রচন্ড গরম, সিটগুলোতেও ঠিকমতো বসার অবস্থা ছিল না। আমার জীবনে এমন অপমান হইনি ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে। আর কখনো মাঠে যাবো না। ভিভিআইপি টিকিট দিলেও না। আমাদের প্রেসবক্সের ওপরের জায়গাটায় বসতে দিতে পারতো। দরকার হলে আমরা টিকিট কিনে নিতাম।’

Advertisement

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি জেতা উচিত ছিল বলে মনে করে চুন্নু। 'ওই ম্যাচটিতে কিছু ছোট ছোট ভুল হয়েছে। আমি গোলরক্ষক মিতুল মারমার প্রতি সম্মান রেখেই বলবো-দুটি গোলই হজম করতে হয়েছে তার জন্য। প্রথম গোলের আগে সে যে ফিস্ট করলো সেটা আরো জোরে করে বল দুরে পাঠাতে পারতো। দ্বিতীয়টাতে সে বলটি ধরতে পারতো। বুকে নেওয়া উচিত ছিল। যাক, এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে’- বলেছেন চুন্নু।

জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের পরদিন সকালে দেশে ফিরে যাওয়াটা ভালোচোখে দেখছেন না চুন্নু। ‘কোচ ম্যাচের পরই চলে যান। তাকে এই অভ্যাস ছাড়তে হবে। তার তো আগামী ম্যাচগুলো নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এ মাসের শেষ দিকে প্রবাসীদের নিয়ে যে ট্রায়াল হবে সেই ট্রায়াল অবশ্যই কোচের দেখা উচিত। গাছাড়া ভাব থাকলে হবে না। প্রয়োজনে লম্বা সময়ের জন্য কোচ নিয়োগ দিতে হবে। ফুটবল নিয়ে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে সেটা কেবল রাজধানীতেই নয়, পুরো দেশেই ছিল।’

‘ঘরের মাঠে আরো দুটি ম্যাচ আছে। সেই ম্যাচ জেতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করতে হবে। ফুটবলে জেগে ওঠা এই হাইপ ধরে রাখতে কিন্তু ম্যাচ জিততে হবে। যদি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিততো তাহলে ফুটবলের চেহারা আরো বদলে যেতো। সামনের ম্যাচগুলো জিতলে দেখবেন ফুটবলে উন্মাদনা থাকছেই। আমি মনে করি, দলকে আরো শক্তিশালী করতে বিদেশের লিগে খেলা ভালোমানের আরো কিছু বিদেশি যোগ করতে হবে’- বলেছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার।

আরআই/আইএইচএস/