দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

অ্যাপল যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই শাওমির চমক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ২২ জুলাই ২০২৫
শাওমির ওয়াইইউ৭ বৈদ্যুতিক গাড়ি। ছবি: ফেসবুক@শাওমি গ্লোবাল

২০১০ সালে শাওমি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী লেই জুন একের পর এক চমকপ্রদ সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন। এক দশক আগে একদিনে ২১ লাখ স্মার্টফোন অনলাইনে বিক্রি করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। আর এখন, শুধু সস্তা ফোন নয়—বিক্রি করছেন বিদ্যুৎচালিত গাড়িও। গত মাসে বাজারে ছাড়ার তিন মিনিটের মধ্যে শাওমির প্রথম বৈদ্যুতিক এসইউভি ওয়াইইউ৭-এর দুই লাখের বেশি ইউনিট বিক্রি হয়েছে।

স্মার্টফোন থেকে গাড়ি: অবিশ্বাস্য উত্থান

বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বিক্রিতে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের পরেই অবস্থান করছে শাওমি। এছাড়া তাদের মোবাইল-সংযুক্ত যন্ত্রপাতির বিশাল তালিকায় রয়েছে এসি, রোবট ভ্যাকুয়াম, স্কুটার থেকে টেলিভিশন পর্যন্ত।

২০২২ সালে তীব্র প্রতিযোগিতায় ধাক্কা খেলেও ২০২৩ সালে সংস্থাটির রাজস্ব বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শাওমির বাজারমূল্য চারগুণ বেড়ে ১৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন>>

অ্যাপলের চেয়ে এগিয়ে শাওমি

অ্যাপল যেখানে এক দশকে বিলিয়ন ডলার খরচ করেও বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) প্রকল্প বাতিল করেছে, সেখানে শাওমি ২০২১ সালে ঘোষিত উদ্যোগে মাত্র ১৫ মাসে তিন লাখের বেশি গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে ফেলেছে। এসইউ৭ স্পোর্টি সেডানের পর ওয়াইইউ৭ এসইউভিও বাজারে তুমুল সাড়া ফেলেছে।

শাওমির ইভি বিভাগ এখনো লাভজনক না হলেও লেই জুন আশাবাদী যে, চলতি বছরেই তা মুনাফায় ফিরবে। আর তা হলে এটি হবে চীনের চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ গাড়ি বাজারে এক বিরল ঘটনা।

শাওমির সফলতার রহস্য

শাওমির সফলতার পেছনে চীনের গাড়ি শিল্পে এখনকার অভাবনীয় দক্ষতাও ভূমিকা রেখেছে। যন্ত্রাংশের কম দাম, দ্রুত ফ্যাক্টরি অনুমোদন ও নির্মাণ এবং অন্যান্য কোম্পানি থেকে শীর্ষ প্রকৌশলী নিয়ে আসাও লেই জুনের কৌশলের অংশ।

অ্যাপলের টিম কুক যেখানে গাড়ি প্রকল্পে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না, সেখানে লেই জুন নিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইভি প্রকল্পে। শাওমি আগে নিজস্ব ফ্যাক্টরি না রাখলেও গাড়ি প্রকল্পের জন্য বেইজিংয়ে নিজস্ব কারখানা গড়েছে। এখন তারা নিজেরাই স্মার্টফোন ও এসি তৈরির কারখানাও গড়ে তুলছে।

বৈশ্বিক সম্প্রসারণ: লক্ষ্য ১০ হাজার দোকান

শাওমির মোট স্মার্টফোন ও ডিভাইস রাজস্বের অর্ধেকই আসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে, বিশেষ করে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে। ২০২৭ সালের মধ্যে বিদেশে ইভি বিক্রির পরিকল্পনা করছে শাওমি। সে লক্ষ্যে তারা ১০ হাজার অফলাইন দোকান খুলতে চায়, যেখানে তাদের ফোন ও গাড়ি দুটোই থাকবে।

চ্যালেঞ্জ: অনেক ফ্রন্টে যুদ্ধ

শাওমির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো—তারা একসঙ্গে অনেক খাতে প্রতিযোগিতা করছে। চীনের ইভি বাজারে এখন তীব্র মূল্যযুদ্ধ চলছে। সেখানে বিওয়াইডি প্রতি মাসে দুই লাখের বেশি গাড়ি বিক্রি করলেও শাওমি করছে মাত্র ২০ হাজার। স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের প্রত্যাবর্তনও প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে।

এরপরও, লেই জুনের নেতৃত্ব ও বিক্রয় কৌশলকে হেলাফেলা করা যায় না। যেখানে অ্যাপলের মতো সংস্থা ইভির ব্যবসা থেকে সরে গেছে, ঠিক সেখানেই শাওমি নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাচ্ছে।

কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।