ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি

সবসময় রেড ক্রস-ই কেন বন্দি বিনিময়ের দায়িত্ব নেয়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ইসরায়েল ফিলিস্তিনে বন্দি বিনিময়ে রেড ক্রস/ ছবি : এএফপি

দীর্ঘ দিনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর শান্ত হয়েছে গাজা উপত্যকা। থেমে গেছে বন্দুকের গুলি বর্ষণ, নেই যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবার পর সোমবার (১৩ অক্টোবর) বন্দি বিনিময় হয়েছে। এ বন্দি বিনিময়ে প্রধান দায়িত্ব পালন করেছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস যা মুসলিম বিশ্বে রেড ক্রিসেন্ট নামে পরিচিত।

রেড ক্রস আসলে কী?

সুইজারল্যান্ডের ধনী ব্যবসায়ী হেনরি ডুনান্ড ১৮৬৩ সালে জেনেভা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)। ১৮৫৯ সালে সংগঠিত সলফেরিনো যুদ্ধে আহত সেনাদের যত্ন নেওয়ার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বহু যোদ্ধার মৃত্যু হয়। সেনাদের এ দুর্দশার চিত্র হেনরিকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই যুদ্ধকালীন আহত ও বন্দি সেনাদের নিরপেক্ষ ও মানবিক সাহায্য প্রদান করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রেড ক্রস সোসাইটি।

জেনেভা কনভেনশন ও রেড ক্রস

প্রতিষ্ঠার পর রেড ক্রস সোসাইটি যুদ্ধ ও সংঘাতকালে মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ শুরু করলেও ১৮৬৪ সালে জেনেভা কনভেনশন স্বাক্ষরিত হলে সংগঠনটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়। এ সংগঠনটি যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ ও মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে জেনেভা কনভেনশনের মূল ৪ টি নীতি বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে । ১৯৪৯ সালের সংস্করণে এ চারটি আইন হচ্ছে-১. আহত ও অসুস্থ সেনাদের সুরক্ষা ২. সমুদ্রযুদ্ধের সেনাদের ও আহতদের সুরক্ষা ৩. যুদ্ধবন্দির সুরক্ষা ৪.যুদ্ধের হামলা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা।

জেনেভা কনভেনশনের তিন নম্বর চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধে বন্দি সেনাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা, খাদ্য, চিকিৎসা ও যোগাযোগের অধিকার নিশ্চিত করা কথা বলা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বন্দি বিনিময় করে থাকে রেড ক্রস সোসাইটি।

সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার কারণ

বন্দি বিনিময়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং মানবিক সংগঠন হিসেবে কাজ করার জন্য রেড ক্রসের ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর স্বাধীন ১৯১ টির বেশি দেশ এ সংগঠনের সদস্য হওয়ায় তা আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করার অধিকার পেয়েছে। এ সংগঠনটি কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক পক্ষের সাথে যুক্ত নয়। তাই দুই পক্ষেরই বিশ্বাস থাকে যে রেড ক্রস সত্যিই মানবিক কারণে কাজ করছে এবং তারা বন্দিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করবে। বন্দি বিনিময় হলো একটি সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। রেড ক্রস নিশ্চিত করে যে, কোন পক্ষ বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে না এবং বন্দি বিনিময় মানবিক এবং সুষ্ঠু নিয়মে হচ্ছে। এছাড়াও রেড ক্রস অনেক সময় বন্দি ও তাদের পরিবারদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তারা পরিবারের সাথে সংবাদ আদান-প্রদান নিশ্চিত করে, যা বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধে রেড ক্রসের ভূমিকা

সোমবার (১৩ অক্টোবর) হামাস গাজায় আটক থাকা ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে রেড ক্রস সোসাইটির প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেছে এবং তারা ইসরায়েলে ফিরে গেছেন। অন্য দিকে হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলও ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে রেড ক্রসের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেছে। মুক্তি পাওয়া এসব ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে রামাল্লা ও গাজায় পাঠিয়েছে রেড ক্রস সোসাইটি। এর আগেও কয়েকবার সংগঠিত আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কাজ করেছে রেড ক্রস সোসাইটি।

সূত্র : উইকিপিডিয়া/দ্য টাইমস অব ইসরায়েল/মিডল ইস্ট আই
কেএম

 

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।