মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের নতুন উত্থান, আলোচনায় এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে কূটনৈতিক ক্ষমতা বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। একসময় ওয়াশিংটনের কাছে হামাসের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ছিল বোঝা, এখন সেটিই পরিণত হয়েছে ভূরাজনৈতিক সম্পদে।
হামাসকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা প্রস্তাব গ্রহণে রাজি করাতে আঙ্কারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হামাস নেতারা প্রথমে ট্রাম্পের আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত তুরস্কের তাগিদে তারা সমঝোতায় রাজি হয়।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, তুরস্কের এই ভদ্রলোক (এরদোয়ান) বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা। তিনি সবসময় আমার পাশে থাকেন।
গাজা চুক্তিতে এরদোয়ানের সইয়ের মাধ্যমে তুরস্ক আবারও মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার খেলায় কেন্দ্রীয় অবস্থানে ফিরেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফলতার পর তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও লাভ তুলতে চাইছে। বিশেষ করে স্থগিত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও সিরিয়ায় নিরাপত্তা স্বার্থে সহযোগিতা বিষয়ে।
কার্নেগি ইউরোপের সিনান উলগেন বলেন, হামাসকে রাজি করিয়ে তুরস্ক নতুন কূটনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে। যদি ট্রাম্পের প্রশংসা দীর্ঘমেয়াদি সদিচ্ছায় রূপ নেয়, আঙ্কারা তা ব্যবহার করে পুরোনো মতভেদ মেটাতে পারবে।
এরদোয়ানের গত সেপ্টেম্বরের হোয়াইট হাউজ সফর ছিল ছয় বছরের মধ্যে প্রথম। সেখানেই উভয় পক্ষ রুশ এস-৪০০ কেনার পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, সিরিয়া নীতি এবং কুর্দি বাহিনী ইস্যুতে সমঝোতার পথ খোঁজে।
তুরস্ক চায়, মার্কিন সমর্থিত এসডিএফ বাহিনী সিরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হোক— কারণ আঙ্কারা এই বাহিনীকে পিকেকে-র সহযোগী মনে করে। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, এই প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হচ্ছে।
গাজা চুক্তি ছাড়াও এরদোয়ানের কূটনীতি সাম্প্রতিক সময়ে নজর কেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনায় মধ্যস্থতা ও সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর বিরোধী শক্তিকে সমর্থন দিয়ে তুরস্কের প্রভাব বেড়েছে।
তবে অনেক আরব দেশ— যেমন মিশর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তুরস্কের এই উত্থানকে অসন্তোষের চোখে দেখছে। আরব বিশ্লেষক আয়মান আবদেল নুর বলেন, এরদোয়ান সুযোগ বুঝে প্রভাব বিস্তারে দক্ষ। উপসাগরীয় দেশগুলো তুরস্কের নেতৃত্বে খুশি নয়, কিন্তু তারা যুদ্ধেরও দ্রুত সমাপ্তি চায়।
এক জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা জানান, আমাদের একমাত্র নিশ্চয়তা এসেছিল চার পক্ষ থেকে— তুরস্ক, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প নিজে কথা দিয়েছিলেন যে, জিম্মিদের মুক্তি ও মরদেহ ফেরত দিলে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হবে না।
ইসরায়েল প্রথমে তুরস্কের অংশগ্রহণে আপত্তি জানালেও ট্রাম্পের চাপের মুখে তেল আবিব আঙ্কারাকে আলোচনায় যুক্ত করতে রাজি হয়।
এই চুক্তির মাধ্যমে অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হয়। সেই আক্রমণে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং পরবর্তী ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
তবে এই যুদ্ধবিরতি কি দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে নিয়ে যাবে, তা স্পষ্ট নয়। তুরস্ক, কাতার ও মিশরসহ আরব দেশগুলো বলছে, বর্তমান পরিকল্পনায় সেই রোডম্যাপ নেই।
এরদোয়ান বলেছেন, আমাদের অগ্রাধিকার এখন পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও গাজা পুনর্গঠন। ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ও শান্তির কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সূত্র: রয়টার্স
এমএসএম