সৌদিতে কর্মীর পাসপোর্ট জব্দ-ফি নেওয়া নিষিদ্ধ, প্লেনভাড়া দেবেন নিয়োগদাতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
সৌদিতে কর্মীর পাসপোর্ট জব্দ-ফি নেওয়া নিষিদ্ধ/ ছবি: সৌদি গ্যাজেট

সৌদি আরবে গৃহস্থালি কাজে সহায়তাকারী কর্মীদের কাছ থেকে নিয়োগ, পেশা পরিবর্তন, সেবা হস্তান্তর বা ওয়ার্ক পারমিটের খরচ আদায় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মীর পাসপোর্ট বা আকামা জব্দের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এছাড়া, প্রতি দুই বছর পর কর্মীর দেশে ফেরার প্লেনভাড়া নিয়োগদাতাকেই দিতে হবে।

এসব নিয়ম ভাঙলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল (প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা) জরিমানা ও তিন বছরের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ওকাজ এবং সৌদি গেজেট।

সৌদির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘গাইড টু দ্য রাইটস অ্যান্ড অবলিগেশনস অব ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স’-এ বলা হয়েছে, নতুন বিধানগুলো গৃহকর্মীদের জন্য ‘সম্মানজনক জীবনযাপন ও স্থিতিশীল কর্মপরিবেশ’ নিশ্চিত করবে।

আরও পড়ুন>>
কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ-সৌদি আরব চুক্তি সই
মক্কার হারাম শরিফে মুসল্লিদের সেবায় বড় স্থাপনা বানাচ্ছে সৌদি
মদিনায় সবুজ নগর গড়তে সৌদি সরকারের নতুন উদ্যোগ

এই গাইড অনুযায়ী, গৃহকর্মী বলতে এমন কাউকে বোঝানো হয়েছে যিনি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিয়োগকর্তার জন্য গৃহস্থালি কাজ করেন—যেমন গৃহপরিচারক, ব্যক্তিগত চালক, শিশুশিক্ষক, গৃহরন্ধনকর্মী, নার্স, মালী, নিরাপত্তাকর্মী বা গৃহপরিচালক প্রভৃতি।

নিয়ম লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ২০ হাজার রিয়াল পর্যন্ত আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য নতুন কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ফের অপরাধ প্রমাণিত হলে এই শাস্তি দ্বিগুণ হতে পারে বা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় রূপ নিতে পারে।

কী কী সুবিধা পাবেন কর্মীরা

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গৃহকর্মীরা স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত বেতন পাবেন। প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন বিশ্রাম এবং সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম পাবেন। টানা দুই বছর কাজের পর এক মাসের ছুটি পাবেন। চার বছর ধারাবাহিক চাকরির পর এক মাসের সমপরিমাণ বোনাস পাওয়ার অধিকার থাকবে তাদের। বছরে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের অসুস্থতাজনিত ছুটি কাটাতে পারবেন কর্মীরা।

এছাড়া, কর্মীর পাসপোর্ট বা আকামা নিয়োগকর্তা জব্দ করতে পারবেন না; প্রতি দুই বছর পর দেশে ফেরার বিমান টিকিট নিয়োগকর্তাকেই দিতে হবে।

গাইডে গৃহকর্মীদেরও কিছু দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমন- নিয়োগকর্তার সম্পদ ও গোপনীয়তা রক্ষা করা, ইসলামী মূল্যবোধ ও সামাজিক শিষ্টাচার মেনে চলা। এসব লঙ্ঘন করলে কর্মীর ওপর সর্বোচ্চ দুই হাজার রিয়াল (প্রায় ৬৫ হাজার টাকা) জরিমানা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা উভয় শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে।

সৌদি আরবে ইয়েমেন, মিশর, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের লাখো মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। কেবল পাকিস্তান থেকেই ২০২০ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ৫০ হাজার কর্মী দেশটিতে নিবন্ধিত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০০৮ সালেই সৌদি কর্তৃপক্ষকে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় কাফালা বা ‘স্পনসরশিপ’ ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিল। ২০২১ সালে সৌদি সরকার ওই ব্যবস্থার কিছু সংশোধন করে, যাতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মীরা নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই দেশ ছাড়তে পারেন।

সূত্র: সৌদি গ্যাজেট, ডন
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।