ট্রাম্পেরও নাম রয়েছে

এপস্টেইন তদন্তের নথিপত্র প্রকাশের অনুমতি মার্কিন কংগ্রেসের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে যৌন অপরাধী ও আর্থিক লগ্নিকারী জেফরি এপস্টেইনের তদন্তের সব ফাইল প্রকাশের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ। ৪২৭-১ ভোটে এটি অনুমোদন করে প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে আনুষ্ঠানিক ভোট ছাড়াই দ্রুত পাস করে। খবর বিবিসির।

এটি এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেবিলে যাবে। তার স্বাক্ষরের পর ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগ এসব নথিপত্র প্রকাশ করবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করে কংগ্রেসকে রেকর্ড প্রকাশের জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর মাত্র কয়েকদিন পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। তার অনেক সমর্থকের জনসমক্ষে প্রতিবাদের মুখে তিনি নথিপত্র প্রকাশের জন্য ভোট দিতে বলেছিলেন।

২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথির মধ্যে কিছু জায়গায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এটি ঘিরে ট্রাম্প এবং এপস্টেইনের সম্পর্ক আবারও শিরোনামে আসে। যদিও কোনো অন্যায় কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউজ।

এপস্টেইনের ফাইলটি প্রকাশের বিষয়ে একমাত্র আপত্তিকারী ছিলেন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান ক্লে হিগিন্স। এসব তথ্য প্রকাশের ফলে ‌‘নিরপরাধ মানুষদের আহত করা হচ্ছে’ বলেও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।

ক্যাপিটল হিলের যারা ফাইলটি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে আক্রমণ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের ‘লুকানোর কিছু নেই’ এমন বক্তব্য ওয়াশিংটনের অনেককে অবাক করেছে।

এপস্টেইনের ফাইল প্রকাশে বারবার চাপ প্রয়োগ করার ঘটনাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন হাউস স্পিকার মাইক জনসন।

মার্কিন সিনেটে এই পদক্ষেপটি শেষ হতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু হাউজে বিকেলের ভোটের পর, ঘটনাক্রম দ্রুত গতিতে বদলাতে থাকে।

সিনেটের নেতা চাক শুমার বিলটি উত্থাপন করেন। এ নিয়ে যেহেতু কেউ আপত্তি করেনি, তাই কোনো বিতর্কও হয়নি এবং বিলটিতে কোনও সংশোধনী যুক্ত করা হয়নি।

বিলটি সিনেট থেকে প্রেসিডেন্টের ডেস্কে যাবে এবং তিনি এটাকে আইনে পরিণত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফাইলগুলো প্রকাশের জন্য অবশ্য কংগ্রেসের ভোটের প্রয়োজন ছিল না - ট্রাম্প নিজেও এই আদেশ দিতে পারতেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে আইনটি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এপস্টেইন এবং তার সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত ‌‌‘সব রেকর্ড, নথি, যোগাযোগ এবং তদন্তমূলক উপকরণ’ প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এপস্টাইনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অ্যানি ফার্মার বলেন, ফাইলগুলো গোপন রাখা ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা’র শামিল। যেহেতু এই অপরাধগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি, তাই আরও অনেক কিশোরী এবং নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ফার্মার।

এপস্টেইন ফাইল কী?
এপস্টেইন ফাইলস শব্দটি কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসনকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, কারণ দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী এবং অর্থদাতা জেফরি এপস্টেইনের অপরাধের কারণে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে আরও স্বচ্ছতার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব সমর্থক এবং তার নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকে চাপ তৈরি হচ্ছিল।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব নথিপত্র প্রকাশের বিরোধিতা করার পর, ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং রিপাবলিকানদের এপস্টেইনের ফাইলগুলো জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করার জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

২০০৮ সালে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর বাবা-মা ফ্লোরিডায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, নিজের পাম বিচের বাড়িতে তাদের মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছে এপস্টেইন। এই ঘটনায় এপস্টেইন প্রসিকিউটরদের সঙ্গে একটি আপিল চুক্তিতে পৌঁছান।

তার পুরো বাড়িজুড়ে মেয়েদের ছবি পাওয়া যায় এবং তাকে একজন নাবালিকাকে যৌনকর্মে প্ররোচনার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যার জন্য তাকে যৌন অপরাধী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। তবে প্রসিকিউটরদের সঙ্গে চুক্তির ফলে বড় ধরনের জেলের সাজা থেকে রক্ষা পায় এপস্টেইন।

১১ বছর পর আবারো, তার বিরুদ্ধে যৌনতার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের একটি নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগ আনা হয়। বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তিনি কারাগারে মারা যান এবং তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে রায় দেওয়া হয়।

এই দুটি ফৌজদারি তদন্তে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র জড়ো করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি এবং তার বিভিন্ন সম্পত্তিতে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা জিনিসপত্র।

তার ব্রিটিশ সহযোগী এবং প্রাক্তন বান্ধবী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধেও একটি পৃথক তদন্ত হয়েছিল, যাকে ২০২১ সালে এপস্টেইনের সাথে যৌনতার জন্য মেয়েদের পাচারের ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

এপস্টেইনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম মূলত সামনে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে।

অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প এবং এপস্টেইন সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, ২০০৮ সালে এপস্টেইন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন যে, তিনি এপস্টেইনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

গত সপ্তাহে হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা তিনটি ইমেইল চেইন প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে এপস্টেইন এবং ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে চিঠিপত্র, যিনি বর্তমানে যৌন পাচারের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ২০১১ সালে পাঠানো একটি ইমেলও রয়েছে, যেখানে এপস্টেইন ম্যাক্সওয়েলকে লিখেছিলেন, আমি চাই তুমি বুঝতে পারো যে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করেনি সে ট্রাম্প, (ভিক্টিম) তার সাথে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে যে, ইমেইলে উল্লেখিত ভুক্তভোগী হলেন এপস্টেইনকে অভিযুক্ত করা ভার্জিনিয়া গিফ্রে। এপ্রিল মাসে মারা যাওয়া গিফ্রে বলেছিলেন যে, তিনি কখনো ট্রাম্পকে কোনো নির্যাতনে অংশ নিতে দেখেননি এবং ইমেইলগুলোতে ট্রাম্পের কোনো অন্যায়ের কোনো ইঙ্গিত নেই।ট্রাম্পও এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো অন্যায়ের কথা বারবার অস্বীকার করে আসছেন।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।