গাজায় তীব্র শীতে মারা যাচ্ছে শিশুরা, তবু ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:০০ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
গাজায় তীব্র শীতে মারা যাচ্ছে শিশুরা/ ফাইল ছবি: এএফপি

গাজায় তীব্র শীতে নবজাতক ও শিশুরা মারা যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েলের ত্রাণ ঢুকতে না দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চলতে থাকায় গাজায় মানবিক সংকট তীব্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে এমএসএফ।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ২৯ দিন বয়সী শিশু সাঈদ আসাদ আবেদিন তীব্র হাইপোথার্মিয়ায় মারা যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে এমএসএফ জানায়, শীতকালীন ঝড় ও আগে থেকেই নাজুক জীবনযাপন পরিস্থিতি একসঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চরম আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুই সপ্তাহ বয়সী শিশু মোহাম্মদ খলিল আবু আল-খাইর প্রচণ্ড শীতে পর্যাপ্ত আশ্রয় ও উষ্ণ পোশাকের অভাবে মারা যায়।

আরও পড়ুন>>
‘বায়রন’ ঝড়ে বিপর্যস্ত গাজা, ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ নিহত ১০
গাজায় নামেই যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়ালো
কেমন যাবে নতুন বছর/ মধ্যপ্রাচ্যে ভালো-মন্দের মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত ইমান আবু আল-খাইর তার দুই সপ্তাহ বয়সী ছেলে মোহাম্মদকে ঘুমের মধ্যে ‘বরফের মতো ঠান্ডা’ অবস্থায় পান। প্রবল বৃষ্টির কারণে কোনো যানবাহন না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পশু টানা গাড়িতে করে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যায় ভর্তি করা হলেও দুইদিন পর তার মৃত্যু হয়।

ইমান বলেন, তার সন্তানের কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না, তাঁবুর ভেতরের চরম ঠান্ডাই তার ছোট শরীর সহ্য করতে পারেনি।

নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের মাতৃ ও শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা এক ভিডিওবার্তায় বলেন, শিশুদের জন্য হাইপোথার্মিয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি সতর্ক করে বলেন, তাঁবুতে থাকা পরিবারগুলোর জন্য উষ্ণতার ব্যবস্থা, মোবাইল হোম বা ক্যারাভান না দিলে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে।

নাসের হাসপাতালে নার্সিং টিমের তত্ত্বাবধায়ক বিলাল আবু সাদা এমএসএফকে জানান, শিশুরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। অনেক নবজাতককে প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায়, শরীর বরফশীতল হয়ে হাসপাতালে আনা হচ্ছে।

এমএসএফ আরও জানায়, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে, যা শীতকালজুড়ে আরও বাড়তে পারে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ে হাজারও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পানিতে ডুবে যাওয়া বা ভেঙে পড়া অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি অবিলম্বে বড় পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ।

গত কয়েক সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া ও হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় গাজায় ৫৩ হাজারের বেশি তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও নর্দমার পানি উপচে পড়ছে। ঝুঁকি জেনেও অনেক পরিবার আধাভাঙা ভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। গত সপ্তাহে এমন ১৩টি ভবন ধসে পড়েছে।

গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েল এখনো গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাঁবু ও কম্বলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঢুকতে না দেওয়ায় অন্তত ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্য থাকা নিরাপদ স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।